• facebook
  • twitter
Thursday, 26 December, 2024

ফরাক্কার নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনেও দু’মাসে বিচার শেষ, মূল অভিযুক্তের ফাঁসি

জয়নগরের পর এবার ফরাক্কা। নাবালিকাকে ধর্ষণ–খুনের ঘটনায় ফের দুই মাসের মধ্যে বিচার শেষ করে এক দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত।

জয়নগরের পর এবার ফরাক্কা। নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ফের দুই মাসের মধ্যে বিচার শেষ করে এক দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত। অপর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবারই দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল জঙ্গিপুর আদালত। শুক্রবার তাঁদের সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক। এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মমতা লেখেন, ‘এক সপ্তাহ আগেই পশ্চিমবঙ্গ পুুলিশের তৎপরতায় ও আমাদের বিচার ব্যবস্থার জোরে জয়নগরে এক নাবালিকাকে নৃশংস ধর্ষণ–খুনের ঘটনায় মাত্র ৬২ দিনের মধ্যে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হয়েছিল। চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর ফারাক্কায় আর এক নাবালিকাকেও ধর্ষণ করে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় আজ দুই অভিযুক্তের একজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলব, প্রত্যেক ধর্ষকই মৃত্যুদণ্ডের থেকে কম কোনও শাস্তি পাওয়ার যোগ্য নয়। এই জঘন্য সামাজিক অপরাধকে দূর করতে আমাদের সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে শাস্তি প্রদান করতে পারলেই এই অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এই কাজ করতে পারলেই আমরা সমাজকে একটা বার্তা দিতে পারব যে এই ধরনের অপরাধ কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না। এই কৃতিত্বের জন্য আমি রাজ্য পুলিশ এবং প্রসিকিউশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলকে অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’

উল্লেখ্য, আরজি করে ধর্ষণ–খুনের ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু ৯০ দিন পরেই তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেনি সিবিআই। এর জেরে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। এই ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অপরদিকে রাজ্য পুলিশের হাতে থাকা পর পর দুটি ধর্ষণ–খুনের মামলায় মাত্র দুই মাসের মধ্যে দোষীদের সাজা ঘোষণা করল আদালত। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত রাজ্য পুলিশ ও রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উল্লেখ্য, আরজি কর তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ–খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তদন্ত প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য কিছুদিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তভার চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। সেই সময়ই সিবিআইয়ের সাফল্যের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। এই আবহে পর পর দুটি ধর্ষণ–খুনের ঘটনায় রাজ্য পুলিশের সাফল্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ফরাক্কাকাণ্ডে দুই অভিযুক্ত দীনবন্ধু হালদার এবং শুভজিৎ হালদারকে দোষী সাব্যস্ত করে শুক্রবার রায় ঘোষণা করে জঙ্গিপুর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। দীনবন্ধুর ফাঁসির সাজা হয়েছে। আর শুভজিতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। ঘটনাচক্রে, জয়নগরকাণ্ডের মতো ফরাক্কার ঘটনাও গত অক্টোবর মাসে আরজি কর আন্দোলনের আবহেই ঘটেছিল।

ফরাক্কায় গত বিজয়া দশমীর দিন দাদুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন ওই নাবালিকা। এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ ছিল, মেয়েটিকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তদন্তে নেমে দীনবন্ধু ও তাঁর বন্ধু শুভজিতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ধৃতরা জানায়, ফুল দেওয়ার নাম করে নাবালিকাকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন দীনবন্ধু। সেখানে তিনি এবং শুভজিৎ মিলে তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালান। পরে তাঁকে খুন করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণ, গলার হার ভাঙা সহ একাধিক আঘাতের স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতাকে মেঝেতে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে।