বাংলার আকাশে দুর্যোগের কালো মেঘ, ধেয়ে আসছে ‘রেমাল’  

কলকাতা, ২৪ মে – ফের প্রাকৃতিক দুর্যোগের চোখ রাঙানি , ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল।  বঙ্গোপসাগরের মধ্যভাগে তৈরি হয়েছে গভীর নিম্নচাপ। শনিবার সেই নিম্নচাপই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। আগামী রবিবার তা আছড়ে পড়বে  স্থলভাগে । হাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ক্যানিং থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে নিম্নচাপ।   

ইয়াসের জেরে তছনছ হয়েছিল সুন্দরবনের একাধিক এলাকা। এবার আবহাওয়া দপ্তরের যা সতর্কবার্তা তাতে পরিস্থিতি প্রায় তেমন দাঁড়াতে পারে। শনিবার সকালে  ঘূর্ণিঝড়ের জেরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। রবিবার দুই ২৪ পরগনায় অতি ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ১০০-১১০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝড়। দুই জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। রবিবার কলকাতায় ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে, মাইকের সাহায্যে চলছে প্রচার। 
 
শুক্রবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য এবং সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে যে সুস্পষ্ট নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছিল, তা নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং গত ১২ ঘণ্টায় আরও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়েছে। এই মুহূর্তে নিম্নচাপের অবস্থান মধ্য বঙ্গোপসাগরে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক ঘণ্টায় এই নিম্নচাপ আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে এবং শনিবার সকালের মধ্যে তা ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তার নাম হবে ‘রেমাল’। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিতে পারে। আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে রবিবার মধ্যরাতে তা আছড়ে পড়তে পারে স্থলভাগে। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী কোন অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’।দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে সুন্দরবনে রেমাল আঘাত হানতে পারে  । সব থেকে বেশি দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উপকূলে।  ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
 
২৬ মে, ২০২১।  বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জেরে তছনছ হয়ে যায় সুন্দরবনের বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকা। থি তিন বছর পর একই দিনে ‘রেমাল’ আছড়ে পড়ার সতর্কবার্তা।  আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই রয়েছে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। শনিবার দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সাত থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে,  সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। রবিবার গোটা দক্ষিণবঙ্গে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দুই ২৪ পরগনায় লাল সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। সেখানে ঝড়ের সঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। 
 
কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়ায় জারি রয়েছে কমলা সতর্কতা। ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। রবিবার দক্ষিণের বাকি জেলাতেও হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। পূর্ব বর্ধমানে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝড়।ইতিমধ্যেই সাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়েছে।
 

আগামী সোমবারও দুই ২৪ পরগনায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রবিবারের থেকে ঝড়ের গতিবেগ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার ওই দুই জেলায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। সঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টি। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদেও সোমবার জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে বইতে পারে ঝড়। সেখানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণের বাকি জেলায় জারি হলুদ সতর্কতা। সেখানেও ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে ভারী  থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রয়েছে কমলা সতর্কতা।২৭ মে, সোমবার সকাল পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করেছে হাওয়া অফিস। যাঁরা সমুদ্রে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুমী দ্বীপ-সহ বকখালি, কাকদ্বীপ, নামখানায় পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।  ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রেন শিবির খুলে দেওয়া হয়েছে।  সুন্দরবনে উপকূলবর্তী এলাকায় নদি বাঁধগুলিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু হয়েছে।