ধানের ৮০ শতাংশ দানা পেকে গেলে কৃষকদের দ্রুত ধান তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কাটা ধান জমিতে ফেলে না রাখার কথাও জানানো হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, ধান কাটার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সুযোগ থাকলে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের সাহায্য নিতে পারেন কৃষকরা। পাশাপাশি অন্যান্য পাকা সবজি ও ফল মাঠে থাকলে তা–ও দ্রুত তুলে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাঠে জল নিকাশির ব্যবস্থা ঠিক রাখতে চাষিদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এদিন বিজ্ঞপ্তিতে কৃষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী শোভনদেবের বার্তা, সবজির মাঁচা ও পান বরজের চারদিক শক্ত করে বেঁধে দিন, যাতে সেগুলি ভেঙে না পড়ে। পাশাপাশি আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত জমিতে কোনও রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গোটা পরিস্থিতির উপর নিজে নজর রাখছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেলা ও ব্লক প্রশাসনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ।
কড়া নাড়ছে ‘দানা’, শুরু প্রশাসনিক তৎপরতা
বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে তার নাম হবে ‘দানা’। এই ‘দানা’ মোকাবিলায় কৃষক, মৎস্যজীবীদের সতর্কতামূলক বার্তা দিল রাজ্য সরকার। দিঘা সহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ দিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সমস্ত ব্লক আধিকারিকদের জেলাশাসকের দপ্তর থেকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে ‘দানা’ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, বকখালির মতো এলাকাতেও নির্দেশিকা জারি করে সতর্ক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর সকালে বাংলা ও ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছানোর সম্ভাবনা এই ঘূর্ণিঝড়ের। এ নিয়ে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসন ও ব্লক স্তরের প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। জনপ্রতিনিধিতে ইতিমধ্যেই এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এদিন নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘দানা আসছে, বলছে ভয়ানকভাবে আসছে, আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সুন্দরবন এলাকায় ফ্লাড সেন্টারগুলিকে পরিষ্কার করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী মজুত রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কাকদ্বীপ এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে মহকুমা দপ্তর। ঘূর্ণিঝড় ও তার প্রভাব নিয়ে কেন্দ্রের জাতীয় বিপর্যয় ম্যানেজমেন্ট কমিটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের। সোমবার দুপুরে ভার্চুয়ালি এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। এই বৈঠকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট চায় কেন্দ্র। বৈঠকে মনোজ পন্থ ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার মুখ্যসচিবও উপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগের কারণে আগামী দুদিন সমুদ্র উত্তাল থাকবে। এর জেরে দুই জেলার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বর্তমানে দিঘায় পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ছে। আগামী কয়েক দিন দিঘা এবং পার্শ্ববর্তী পর্যটনকেন্দ্রের পর্যটকেরা যাতে সমুদ্রস্নানে না যান, সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যবসায়ীরাও সতর্কতা অবলম্বন করছেন।