পশ্চিমবঙ্গের ভােট যত এগিয়ে আসছে, অহরহ বাংলার মনীষীদের উল্লেখ ও উদ্ধৃত করতে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতাদের। কিছুটা অভিনব ভাবেই দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক বৈঠকের মধ্যে চলে এল দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ির ছবি। উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজ ভিডিয়াে বৈঠক করলেন মােদি । তাঁর পিছনে পর্দায় আগাগােড়া দেখা গেল দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের ছবি।
কূটনৈতিক শিবির অবশ্য উজবেকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কুটনৈতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে রামকৃষের কোনও যােগসুত্র দেখতে পাচ্ছে না। সাধারণভাবে রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ভিডিয়াে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রনেতাদের পিছনে থাকে জাতীয় পতাকার ছবি। বিদেশ মন্ত্রকের সাংবাদিক সম্মেলনেও এমনটাই দস্তুর। কিন্তু সেই ঐতিহ্য আজ ভেঙে দিলেন মােদি ।
প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গের ভোট কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে তিনি যে মঞ্চই পাচ্ছেন সেখান থেকেই বাংলাকে তুলে ধরছেন? আত্মনির্ভর ভারতের ক্ষেত্রে ঋষি অরবিন্দ, স্বদেশি পণ্যের প্রতি নির্ভরতার প্রশ্নে কবি মনমােহন বসু, ভারতমাতার আরাধনায় স্বামী বিবেকানন্দ এবং যত্রতত্র রবীন্দ্রনাথের উল্লেখ মােদির মুখে শােনা যাচ্ছে। এবারে সেই তালিকায় যুক্ত হল বাঙালির আবেগ এবং ভক্তির দক্ষিণেশ্বরও।
দমদমের সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা সৌগত রায় অবশ্য গােটা ঘটনাকে ‘হাস্যকর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর কথায়, দক্ষিণেশ্বর সবার শ্রদ্ধার জায়গা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেটা করেছেন সেটা হাস্যকর। বাংলার নির্বাচনকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় প্রােটোকলটাও ভুলে যাচ্ছেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাষ্ট্রনেতার পিছনে দেশের পতাকা থাকাটাই রেওয়াজ। সৌগতবাবুর কথায়, এসব করে কিছু হবে না। পশ্চিমবঙ্গের ভােটের লড়াইটা বাঞ্জলি বনাম বাহারিদের মধ্যে। বাহারি অর্থাৎ বহিরাগতদের কোনও জায়গা এখানে নেই। প্রধানমন্ত্রী মরিয়া চেষ্টা করতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারাচ্ছেন।
দক্ষিণেশ্বরের মেয়ে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানাচ্ছেন তিনি গর্বিত। তাঁর কথায়, ভারত-উজবেকিস্তান বৈঠকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ছবি এবং ভবতারিণী মন্দিরের ছবি দেখতে পেয়ে এক জন বাঙলি হিসেবে গর্বিত। বাঙলির ঐতিহ্যকে এই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।