মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে ‘জোট’ নিয়ে সিপিএম গবেষণায় নেমেছে। আরজি কর কাণ্ডের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে তারা অতি বামেদের সঙ্গে মিশে যেতে চাইছে। উদ্দেশ্য হল, যদি এই জোট তাদের কিছুটা অক্সিজেন জোগাতে পারে!
সিপিএম জোটের রাজনীতির গবেষণা অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে করছে। ষাটের দশকে যুক্তফ্রন্ট এবং পরবর্তীকালে বামফ্রন্ট ছিল, সেই গবেষণারই ফসল। যুক্তফ্রন্ট গড়ে অবশ্য খুব একটা সফল হয়নি তারা। কিন্তু বামফ্রন্টের বকলমে দীর্ঘদিন সিপিএম বাংলায় একাই দীর্ঘদিন ‘রামরাজত্ব’ চালিয়েছে। প্রথম দিকে বামফ্রন্ট শরিকদের তারা সম্মান জানিয়েছিল। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক দপ্তর শরিকদের ছেড়ে দিয়েছিল।
ক্ষমতার ‘মধু’ খেয়ে সন্তুষ্ট ছিল বামফ্রন্টের শরিকরা। কিন্তু ক্রমশ তারা বুঝতে পারে সিপিএম তাদের ডানা ছেঁটে দিচ্ছে। আর জেলায় জেলায় শরিকদের দিকে পার্টির হার্মাদদের লেলিয়ে দিয়ে তাদের নির্মূল করে দিচ্ছে। যখন শরিকরা বুঝতে পারল, বামফ্রন্ট নামেই, আসলে একটা সাইনবোর্ড। সবটাই সিপিএমের একচ্ছত্র। তখন অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তারপর তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পরিবর্তনের ঝড়ে বামফ্রন্টই ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গেল।
২০১১ সালের সেই ঝড়ের পর থেকে সিপিএম অতিশয় রুগ্ন হয়ে পড়েছে। রোগশয্যা থেকে উঠে দাঁড়াতে তারা জোট বাঁধার লক্ষ্যে গবেষণা করেই চলেছে। কার্যত বামফ্রন্টের শরিকদের আপত্তি সত্ত্বেও চিরশত্রু কংগ্রেসকে ভোটযুদ্ধে আলিঙ্গন করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা। পরে সিপিএম-কংগ্রেসের সেই জোটে মুসলিম প্রভাবিত সংগঠন আইএসএফ সামিল হয়। তাতে দেখা যায়, জোটের গবেষণা ভয়ঙ্করভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। নজিরবিহীনভাবে সিপিএম তথা বামেরা বর্তমানে বিধানসভায় অদৃশ্য। তাদের কেউ ভোটে জিতেই আসতে পারেনি। লোকসভাতেও এ রাজ্য থেকে বর্তমানে বামেদের কোনও প্রতিনিধি নেই।
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে হাতিয়ার করে, বাম-অতি বামদের নিয়ে জোট বাঁধার চেষ্টায় মাঠে নেমেছিল সিপিএম। কিন্তু মমতার সঠিক পদক্ষেপে আন্দোলনের নামে তাদের সংকীর্ণ রাজনীতি ভেঙে যায়। আন্দোলন চলার সময় রাজ্যে যেসব বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়, সেখানে বামেরা শুধু গোহারা নয়, তাদের প্রার্থীদের জমানতও খোয়া যায়। ফলে, সিপিএমের চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়।
সর্বশেষ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় আহত ছাত্র ইন্দ্রানুজের মা-বাবা লালপার্টির জোট বাঁধার আন্দোলনে জল ঢেলে দিয়েছেন। ছাত্রের বাবা অমিত রায় এবং মা বর্ণালীদেবী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, মোটেই তাঁদের পুত্রকে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা মারেনি। অমিতবাবু তো আরও এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘ঘটনাকে বিকৃত করে কেউ কেউ রাজনীতি করছে। তারা যেন চেয়েছিল আমার পুত্র গাড়ি চাপা পড়ে মরে যাক। তাতে তাদের প্রচারে সুবিধা হত।’
আসলে রাজ্যের আপামর মানুষের মমতার নেতৃত্বের প্রতি অগাধ আস্থা রয়েছে। তারা মনে করে, যে কোনও অন্যায়-অবিচারের বিহিত করাই হল মমতার রাজধর্মের বৈশিষ্ট্য। কোনও রাজনীতির রং দেখে এ রাজ্যে অপরাধের বিচার হয় না। বিভিন্ন রাজ্যের ঘটনাবলী থেকেই প্রমাণ হয়, মা-মাটি-মানুষের বাংলা অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম।