নিয়ম মাফিক আগামী বছর সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরো থেকে বিদায় নেবেন সাতজন নেতা-নেত্রী। অর্থাৎ, আগামী এপ্রিলে সর্বভারতীয় স্তরে সিপিএমে তরুণ মুখ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাংলাতেও সিপিএম তরুণ প্রজন্মের নেতানেত্রীদের গুরুত্ব দিতে নজিরবিহীন এই নির্দেশিকা জারি করল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। দুই পৃষ্ঠার এই নির্দেশিকার প্রথম পৃষ্ঠায় দেওয়া হয়েছে একটি ‘এজ টেব্ল’ । সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও এরিয়া কমিটি যদি ১৩ জনের হয়, তা হলে তার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ পাঁচ জনের বয়স হতে হবে ৫০-এর কম। এই পাঁচ জনের মধ্যেও বয়সের ভাগ রয়েছে। ওই পাঁচ জনের মধ্যে এক জনের বয়স ৩১ এর মধ্যে , এক জনের বয়স ৪০-এর মধ্যে এবং তিন জনের বয়স ৫০-এর মধ্যে হতে হবে। দুইজন মহিলাকেও কমিটিতে রাখতে হবে।
রাজ্য সিপিএম তাদের নির্দেশিকায় স্পষ্ট উল্লেখ করেছে, নির্দেশ মেনে বিদায়ী কমিটি যে প্যানেল পেশ করবে, তার পাল্টা সম্মেলন কক্ষ থেকে কোনও নাম এলে যদি ভোটাভুটি করতে হয়, তবে ব্যালটে প্রত্যেকের নামের পাশে বয়সের উল্লেখ করতে হবে। প্রতিনিধিরা যাতে হিসেবে করে ভোট দিতে পারেন। এর আগে সম্মেলন সংক্রান্ত পার্টি চিঠিতেও সিপিএম উল্লেখ করেছিল, যত জনের কমিটি হবে সেই সংখ্যক ভোট দিতে হবে। নয়তো ওই ব্যালট বাতিল বলে গণ্য করা হবে।
উদাহরণ দিয়ে সিপিএমের এক নেতা বলেন, ‘এরিয়া কমিটি যদি ১৩ জনের হয়, তা হলে প্রথমে বিদায়ী কমিটি সেই তালিকা পেশ করবে। পাল্টা কোনও নাম থাকলে তা হলে কক্ষ থেকে জমা দিতে হবে। কিন্তু ভোট দেওয়ার সময় কেউ ১০ জন বা ১৫ জনকে ভোট দিয়ে ব্যালট জমা দিতে পারবেন না। তাঁকে পছন্দমতো ১৩ জনকেই ভোট দিতে হবে। নয়তো ব্যালট বাতিল হবে।’ তিনি আরও জানান, বয়সবিধি মেনে ভোট দিতে হবে। না হলে সেই ব্যালটও বাতিল হবে। জেলা কমিটির যে নেতৃত্ব ভোটগণনার দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদেরও বয়সবিধি মেনেই গণনা করতে হবে ।
রাজ্য কমিটির এই নির্দেশিকার ফলে সমস্যায় পড়েছেন প্রবীণ নেতাদের একাংশ। তাঁদের অনেককেই এই নিয়মের কারণে কমিটির ‘নেতা’ থেকে ‘কর্মী’ হয়ে যেতে হবে। তবে রাজ্য নেতৃত্ব যেভাবে বয়সবিধি কার্যকর করতে চাইছে তাতে দলের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। দলের বয়সের বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবে নিলেও অন্য অংশের বক্তব্য, যে ভাবে দল নির্দেশিকা দিয়েছে, তা খুবই যান্ত্রিক। তাঁদের বক্তব্য, এই নিয়মের বেড়াজালে পড়ে অনেক দক্ষ নেতৃত্বকে কমিটির বাইরে চলে যেতে হবে। আবার শুধুমাত্র বয়সের বিচারে অনেক অনভিজ্ঞ নেতা দলে অন্তর্ভুক্ত হবেন যা পার্টির জন্য ভাল হবে না।
সিপিএম মানেই পক্ককেশ , এই ধারণা এবার বদলাতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলার সিপিএম নেতৃত্ব। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দীপশিতা ধর, সৃজন ভট্টাচার্যের মতো তরুণ নেতারা উঠে এসেছেন। বয়স ও শারীরিক সক্ষমতাকে গুরুত্ব দিতে আরও উদ্যোগী সিপিএম নেতৃত্ব। ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে পশ্চিমবঙ্গে শাখা কমিটির সম্মেলন ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে। ১ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এরিয়া কমিটির সম্মেলন শেষ করতে হবে। জেলা কমিটির সম্মেলন ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে হবে। রাজ্য সম্মেলন হবে ২২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারী হুগলির কোন্নগরে। তবে বিশেষ কারণে বদল ঘটতে পারে সম্মেলনের দিনক্ষণ।