জয়নগর কাণ্ডে পুলিশকে পকসো ধারা জুড়তে বলল আদালত। পাশাপাশি, নিহত নাবালিকার দেহের ময়নাতদন্ত কল্যাণী এইমস-এ হাসপাতালে করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সেখানে যদি ময়নাতদন্তের সঠিক পরিকাঠামো না থাকে, তা হলে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কল্যাণী এইমসের চিকিৎসকরাই ময়নাতদন্ত করবেন। ময়নাতদন্তের সময় জেএনএম হাসপাতালের এক জন কর্মীও উপস্থিত থাকতে পারবেন না। সোমবার বেলা ১১:৪৫ মিনিটে কল্যাণী এইমসে দেহ যাবে। বারুইপুর কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। শুধুমাত্র বাবা-মা চাইলে ময়নাতদন্তের ভিডিয়ো দেখতে পারবেন। ময়নাতদন্ত কক্ষের বাইরে তাঁরা থাকতে পারবেন।’
রবিবার আদালতে জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি হয়। সেই শুনানিতে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, জয়নগর কাণ্ডে পুলিশ কেন পকসো আইনে মামলা রুজু করেনি? মেয়েটির বয়স যেহেতু ১০ বছরের কম, সেহেতু পুলিশকে এই ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত।
এদিকে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে মেয়ের দেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানান মৃতার বাবা। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সেই দাবি জানানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের নির্দেশ মেনে জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি হয়। যদিও কমান্ড হাসপাতালের তরফে শুনানির সময় জানানো হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের কোনও ময়নাতদন্ত সম্ভব নয়। পাল্টা মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগেও এই হাসপাতালে বাইরের লোকের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে হাইকোর্ট সোমবার কল্যাণী এইমসে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জয়নগরের এই আক্রান্ত শিশুর বয়স মাত্র নয় বছর। তাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর। শুক্রবার রাতে একটি জলাভূমি থেকে দেহ উদ্ধারের পর শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয়রা। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ ওঠে। গ্রামবাসীদের দাবি, পুলিশে প্রথমে নিখোঁজের ঘটনা জানানো হলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হলে নাবালিকার এই পরিণতি হতো না বলে দাবি করা হয়। সোমবার মোমিনপুরের কাটাপুকুর মর্গে নাবালিকার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম ও বিজেপি-র কর্মী সমর্থকরা। বিজেপি নেতৃত্বের তরফে ছিলেন অগ্নিমিত্রা পল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। আবার সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধরও সেখানে হাজির হন। তাঁরা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ফলে বাধ্য হয়ে মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে এই ঘটনার দুই দিন পরে জয়নগরে মানুষের বিক্ষোভ অব্যাহত। রবিবার কুলতলির গরানকাঠি মোড়ে অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। এছাড়া জয়নগরের মহিষমারি হাটে গ্রামবাসীরা মিছিল করেন। মিছিলের স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডে লেখা হয়, ‘প্রতিবাদের এক স্বর, আর জি কর থেকে জয়নগর’। আবার এই ঘটনার জেরে রবিবার বিকেলে জয়নগর থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে বজরং দল ও দুর্গা বাহিনী। নিহত ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকরাও দেখা করতে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। কুলতলি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও অগ্নিমিত্রা পল। জয়নগর থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে এসইউসিআই।