ওরা না মানল বাধা না মানল বিধি। ষষ্ঠীর বোধনের দিনে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে বাঁধভাঙা ভিড় বুঝিয়ে দিল বিধিভাঙার জন্যই তারা এতদিন অপেক্ষা করছিল। অথচ অভিজ্ঞমহলের পক্ষ থেকে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সাবধানবার্তা দেওয়াই ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনায় লকডাউনের বিধিনিষেধও লাও ছিল। আদালতের নির্দেশের প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে ভিড় করে ঠাকুর দেখায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।
কিন্তু ষষ্ঠীর দিনে দেখা গেল এসবকে থোড়াই কেয়ার করে প্যান্ডেলমুখো বাঙালি। প্রশাসনিক পরামর্শ, কেন্দ্রের সতর্কবার্তা, হাইকোর্টের নির্দেশ কোনওকিছুকেই গ্রাহ্য করতে চাইছে না মানুষ। সরকারের এদিকে পুজোর মরসুমেও রাজ্য নির্দেশে গড়ায়নি আমজনতার জন্য লোকাল ট্রেনের চাকা।
কিন্তু মানুষের পায়ের বেগে পথ কেটে গিয়েছে। তবে লোকাল ট্রেন চালু না হওয়ার এবার কলকাতার পুজো দেখার জন্য যে শহরতলির ভিড়টা ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন প্যান্ডেলে। সেটা খানিকটা অনুপস্থিত। তবে ট্রেন না চললেও চালু রয়েছে মেট্রো। সেইসঙ্গে সরকারি বাসের নাইট সার্ভিস।
ফলে বাড়ি ফেরার তাড়া না নিয়ে বেপরোয়া মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। ছুটে বেড়াচ্ছেন কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে। বেহালা থেকে সল্টলেকে। অন্যদিকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী এবার অষ্টমী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কায় এবার ষষ্ঠীর দিন থেকেই দলে দলে মানুষ শুরু দিকেই ঝোড়ো ইনিংস খেলতে বেরিয়ে পড়েছেন প্যান্ডেলের দিকে। শুধু কী প্যান্ডেল?
রেস্তোরাঁগুলিতে তিল ধারণের জায়গা নেই। সোমবার হলেও ষষ্ঠীর দিনে আগেই সরকারি ছুটি পড়ে গিয়েছে। তাই মানুষ বিকেল হতে হতেই আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। এবার কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ শহর থেকে শহরতলির প্রায় প্রতিটি পুজো প্যান্ডেলে উপচে পড়া ভিড়। ফলে দূরত্ববিধি শিকেয়।
এদিকে ভ্যাপসা গরমের দোহাই দিয়ে মুখের মাস্ক স্থানচ্যুত। চলতে থাকা ভিড়ে স্যানিটাইজারে হাত ধোওয়ার কথা তো ভুলেই গিয়েছে সবাই। ফলে যে যাই বলুক করোনাকে কেয়ার করি না মুডটাই রয়েছে সকলের। পুজো উদ্বোধনে এবার ফার্স্ট বয় শ্রীভূমি স্পোর্টিং। তাদের চলতি বছরের ভাবনা বুর্জ খলিফা।
এক টুকরো দুবাইকে কলকাতার শহরতলিতে ফুটিয়ে তুলেছে সুজিত বসুর পুজো। তাই জনতার স্রোতের ষষ্ঠীতেও। ঢল নেমেছে প্যান্ডেলের মাস হয়েছে মাস্কহীন। উত্তর কলকাতার এক জনপ্রিয় পুজোর বাইরে মাস্কহীন জনতাকে ধরতেই ঝটিতি জবাব-পুরো প্যান্ডেলটাই মাস্ক পরে ঘুরলাম। বাইরে এসে মাস্ক খুলে একটু বাতাস নিচ্ছি।
উত্তর কলকাতার আরেকটি পুজো মণ্ডপে আবার এই প্রজন্ম আরও দুঃসাহসী। বলছে ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ হয়ে গিয়েছে। মাস্ক পরে কী হবে? অন্যদিকে ম্যাডক্স স্কোয়ারের সেই আড্ডাটা কিন্তু সত্যিই আজ আর নেই। সুরুচি সংঘ কিংবা নাকতলার ঠাকুর কিংবা প্যান্ডেলের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকারও জো নেই।
সব মিলিয়ে ষষ্ঠীর দিনেই বোঝা যাচ্ছে , শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নিয়ম ভাঙার খেলা। এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন উৎসবে বেলাগাম হলেই কিন্তু ‘দুয়ারে বিপদ’। কিন্তু সেসব কথা কে শুনবে। আপাতত যে ‘দুয়ারে দুর্গা’।