দেবাশিস দাস
এবার পুলিশে পদোন্নতি, বদলির ক্ষেত্রে এক জানালা নীতি গ্রহণ করল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। পুলিশে পদোন্নতি এবং বদলিকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সামনে আসছিল। সেই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হল নবান্ন। কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সবার বদলি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরলীকরণ করার জন্য এই প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। পুলিশে পদোন্নতি এবং বদলিকে ঘিরে বিভিন্ন ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ এরফলে কিছুটা হলেও কমবে, এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের সময়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিককে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। সেই নিয়েও যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে পুলিশকর্মীদের মধ্যে। নির্বাচন কমিশনের নিয়মে একটানা তিনবছর এক জেলায় থাকা সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পুলিশের উর্ধ্বতন আধিকারিকদের একাংশকে অন্য জেলায় বদলি করে দেওয়া হয়। ভোট শেষ হয়ে গেলে তাঁদেরকে পুরনো জেলায় ফেরানো হয়নি।
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হাজারেরও বেশি পুলিশ আধিকারিক রয়েছেন, যাঁদেরকে ভোট মেটার পরও পুরনো জেলায় ফেরানো হয়নি। যদিও পর্যায়ক্রমে সেই আধিকারিকদের ফেরানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে ভবানী ভবনে পুলিশ আধিকারিকদের পরিবারের লোকেরাও হাজির হয়েছিলেন শীর্ষকর্তাদের কাছে আবেদন জানাতে। আরজি কর আন্দোলনের সময় পুলিশ কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা ভবানী ভবন অভিযান কর্মসূচি ঘোষণাও করেছিলেন। তারপর থেকে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের শীর্ষস্তরে বিশদে আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উদ্যোগী হয়ে পুলিশের বদলি ও পদোন্নতির বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি’কে নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি রাজ্যের পুলিশেরও দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁর নির্দেশ পাওয়ার পর রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার পুলিশে বদলি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে শুক্রবার এক নির্দেশিকা জারি করলেন। সেই নির্দেশিকায় রাজ্যের প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার, কমিশনারেটের কমিশনার, অন্যান্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন এডিজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অজয় মুকুন্দ রানাডে। পুলিশে বদলি এবং পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা আনতে প্রশাসনিক স্বার্থে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ডিরেক্টরেটের তরফে জানানো হয়েছে। নবান্নের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ডের তরফে। এই বোর্ডের কনভেনার বিজিতাশ্ব রাউত বলেন, দু-একটি সমস্যা রয়েছে। তা সত্ত্বেও যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হল, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এর ফলে পুলিশকর্মীদের বদলি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে ধরনের সমস্যা ছিল, তার সুরাহা হবে। রাজ্যে কনস্টেবল থেকে শুরু করে এসআই, সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার পুলিশকর্মী রয়েছেন।
এদিকে, সাধারণত, দু’টি শ্রেণিতে এই বদলি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। একটি সাধারণ শ্রেণি, অন্যটি বিশেষ শ্রেণি। সাধারণ শ্রেণির ক্ষেত্রে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে আবেদন নেওয়ার কাজ শুরু হবে এইচআরএমএস পোর্টালের মাধ্যমে। ডিসেম্বর মাস জুড়ে আবেদন গ্রহণ করা হবে। তারপর সেই আবেদন সাতদিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে পুলিশ সুপার/কমিশনারের অফিসে। আবেদন পাঠানোর দশ দিনের মধ্যে সেই আবেদন কতটা যুক্তিগ্রাহ্য, তা মূল্যায়ন করে পুলিশ সুপার পাঠিয়ে দেবেন রাজ্য পুলিশের আইজি এবং ডিআইজির কার্যালয়ে। রাজ্য পুলিশের এই আধিকারিক তাঁরা এই আবেদনপত্র খতিয়ে দেশে দশ দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেবেন জোনাল এডিজি এবং আইজিপি’র কাছে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাবে। প্রতি বছরের সাধারণ বদলি হবে মার্চ এবং এপ্রিল মাসে। বদলির ক্ষেত্রে প্রাথমিক, সাধারণ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে এই নীতি গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনিক স্বার্থে এই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ফলে এবার থেকে পুলিশে যখন তখন বদলি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে এল।
স্পেশাল বদলির ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ঠিক একইভাবে অনলাইনেই আবেদন করতে হবে। এরপর সেই আবেদন সাতদিনের মধ্যে পুলিশ সুপার কিংবা পুলিশ কমিশনারদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই আবেদনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে দশ দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেবেন পুলিশ ডিরেক্টরেটের কাছে। পুলিশ ডিরেক্টরেটের যে কমিটি রয়েছে এই কমিটি প্রতিটি আবেদন খতিয়ে দেখবে। প্রতি তিনমাস অন্তর এই কমিটি আবেদনের নিষ্পত্তি করবে। এক্ষেত্রেও আবেদন গ্রহণ করা হবে এইচআরএমএস পোর্টালের মাধ্যমে। এডিজি অ্যান্ড আইজিপি অফ পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর সব বদলির নির্দেশিকা জারি করা হবে পুলিশ ডিরেক্টরের থেকে। মহিলা কনস্টেবলরা যাঁরা ‘র্যাফ’ থেকে বদলি হবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে তাঁরা যে জেলার বাসিন্দা, সেই জেলায় তাঁদেরকে বদলি করা হবে। তবে, সেই জেলায় কত শূন্যপদ রয়েছে, তার উপর নির্ভর করবে। যে কনস্টেবলরা ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন তাঁরাও নিজ নিজ জেলায় বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে শূন্য পদের উপর নির্ভর করবে তাঁদের বদলির বিষয়টি।