ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইনে এলোপাথাড়ি গুলি কনস্টেবলের

প্রতিকি ছবি (Photo: AFP)

হিন্দু ভাইদের একত্রিত হওয়ার মতো বিস্ফোরক পোস্ট করে ফেসবুকে। তারপরেই এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে ঝাড়গ্রামের এক জুনিয়র কনস্টেবল। এদিন বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইনে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তার এই কর্মকাণ্ড। এই ঘটনার জেরে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়।

এদিন ঝাড়গ্রাম শহরের পুলিশ লাইনে বেলা টা নাগাদ জুনিয়র কনস্টেবল কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় গুলি ছুঁড়তে থাকে। এদিন বিকেলে শুরু হয় বৃষ্টি, কিন্তু ওই সময়ও চলছিল গুলি।

এদিকে পুলিশ ওই জুনিয়র কনস্টেরলের গতিবিধি লক্ষ করার জন্য ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে তার ছবি তুলে অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছিল, কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। তবে বৃষ্টির জন্য ড্রোন চালানো বন্ধ হয়। বৃষ্টির পরেও আরও এক রাউন্ড গুলি চালানোর শব্দ পাওয়া যায়।


জেলা পুলিশি সুত্রে জানা গিয়েছে, ওই জুনিয়র কনস্টেবলের নাম বিনোদকুমার মাহাত। বাড়ি পুরুলিয়া জেলার কোটশিলা থানার গোরাইয়াটার গ্রামে। জানা গিয়েছে, এদিন তিনি তিন দফায় ফেসবুকে পোস্ট করেছে। সেই পোস্টগুলিতে হিন্দুত্ববাদ সমর্থনেই করেছিলেন।

পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন তিনি পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারের দু’তলায় সেন্ট্রি ডিউটি করছিলেন। তার সঙ্গে আরও পাঁচজন ছিল বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে তিনজন ছাদের উপরে ডিউটি করছিলেন। বাকি দু’জন ছাদের নীচে ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা দু’জনকে ভয় দেখালে একজন অস্ত্র এবং গুলি রেখে দিয়ে পালিয়ে আসেন। আর একজন ওখানেই কোথাও ছাদের কার্নিসে লুকিয়ে রয়েছে বলে পুলিশি সুত্রে জানা গিয়েছে।

এদিকে রাত ৭টা নাগাদ বাঁকুড়া রেঞ্জের আইজি রাজ শেখরণ ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইনে এসে পৌঁছন। তার আগে কয়েক দফায় পুলিশবাহিনী তাকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে, কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। এদিন সন্ধ্যার সময় পুলিশের একটি বাহিনী জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সন্তর্পণে পুলিশ লাইনের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। ওই সময় সেন্ট্রি দেখতে পেয়ে আবার গুলি ছুঁড়তে শুরু করলে তারা পিছিয়ে আসে।

পুলিশি সুত্রে জানা গিয়েছে, জুনিয়র কনস্টেবল বিনোদকুমার মাহাত’র পরিবারের মা, বাবা, ভাইপো ও তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হয়েছে কিনা, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।

এদিন সন্ধ্যার পর পুলিশ লাইনের সমস্ত লাইট নিভিয়ে দেওয়া হয়। তাকে বার বার অনুরোধ করা হয় সেখানে নেমে আসার জন্য। কিন্তু কারও কথায় সে নেমে আসেনি। বিনোদকুমার ছাদ থেকে উত্তর দেন, ‘আমি বেঁচে আছি। আমার কাছে অনেক গুলি আছে।’ এমনকি সে অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়িকে লক্ষ্য করেও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।

এদিকে এদিন দুপুরেই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন ঝাড়গ্রামের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, পুলিশ সুপার অমিত কুমার, ভরত রাঠোর সহ পুলিশের একাধিক আধিকারিকা। সূত্রের খবর, ওই জুনিয়র কনস্টেবলকে রাতের দিকে ছাদ থেকে নামানো হয়। এলোপাথারি গুলি চলার ফলে আতঙ্কের রেশ কাটছে না কিছুতেই। ঘটনার জেরে পুলিশ লাইনের রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপারের অফিস থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে জঙ্গলখাস এলাকায় প্রায় বাহাত্তর একর জমির উপর গড়ে উঠেছে এই পুলিশ লাইনটি। ২০১৬ সালে এই পুলিশ লাইন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। গত বছর নভেম্বর মাসে এই পুলিশ লাইনের প্রশাসনিক ভবনের শুভ উদ্বোধন হয়েছে।