বঞ্চিত হয়েছেন অন্তত ১৫৮ জন যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। আর অবৈধভাবে এক নম্বর দিয়ে ২৬৪ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এভাবেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কারচুপি করেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে এই দাবি করেছে সিবিআই।
কিন্তু কীভাবে এই এক নম্বর নিয়ে ষড়যন্ত্র হল? আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে তা বিশদে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। ২০১৪ সালে আয়োজিত প্রাইমারি টেট অনুযায়ী ২০১৭ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ করা হয়। সিবিআই জানিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের একাংশ বাংলা মাধ্যমের প্রশ্নপত্রে থাকা একটি প্রশ্ন নিয়ে আপত্তি তোলেন।
পরীক্ষার্থীদের দাবি, ওই প্রশ্নের জন্য চারটি বিকল্প ছিল। সাধারণত একটি উত্তরই সঠিক বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রথম এবং দ্বিতীয় বিকল্প – উভয়ই সঠিক। ফলে দুটি উত্তরের মধ্যে কোনও একটি বেছে নিলেই পরীক্ষার্থীদের নম্বর পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তা করেনি। যে সমস্ত পরীক্ষার্থী দ্বিতীয় অপশনটি বেছে নিয়েছেন, শুধুমাত্র তাঁদেরই নম্বর দেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রথম অপশনটি বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের নম্বর দেয়নি পর্ষদ।
বিতর্কের জল গড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। সমস্যা মেটাতে পর্ষদ জানিয়ে দেয়, যে সমস্ত পরীক্ষার্থী প্রথম বিকল্পটি বেছে নিয়েছেন, তাঁদেরও নম্বর দেওয়া হবে। আর দ্বিতীয় বিকল্পের ক্ষেত্রে তো আগেই নম্বর দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্তও রাখে পর্ষদ। অতিরিক্ত এক নম্বর দেওয়ার বিষয়টির ক্ষেত্রে শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং যাঁরা কেবল এক নম্বরের জন্য পাশ করতে পারেননি, তাঁদের বিবেচনার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে জানানো হয়, শুধুমাত্র বাংলা মাধ্যমের পরীক্ষার্থীরাই এই নম্বর পাওয়ার যোগ্য।
সিবিআইয়ের দাবি, পর্ষদ নির্ধারিত মাপকাঠি মেনে দেখা যায়, এক নম্বর পাবেন ৪২৮ জন প্রার্থী। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাত্র ২৭০ জনের প্যানেল প্রকাশ করে পর্ষদ। তাঁদের মধ্যে চাকরি পান ২৬৪ জন। অর্থাৎ, নম্বর কেলেঙ্কারি করে সরাসরি বঞ্চিত করা হয় ১৫৮ জনকে।
পর্ষদ নির্ধারিত শর্তে বলা হয়েছিল, এই এক নম্বর পেতে পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, ওই ২৭০ জনের মধ্যে ৪৬ জন অপ্রশিক্ষিতকে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়। উর্দু মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছেন, এমন দু’জনকেও নম্বর দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের দাবি, ঠিক এভাবেই প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছে মতো প্রার্থীদের ২৭০ জনের তালিকায় জায়গা করে দেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ২৭০ জনের তালিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু কারচুপি ধরা পড়ে যাবে, সেই ভয়ে প্রার্থীদের নাম, রোল নম্বর বা বাবার নাম জাতীয় কোনও তথ্য ছিল না তালিকায়। সিবিআইয়ের দাবি, কারচুপি এড়াতে ইচ্ছাকৃত ভাবে এই তথ্যগুলি প্যানেলে গোপন রাখা হয়েছিল।