খায়রুল আনাম: কেন তিনি বার বার মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন? নিজের সাংসদ এলাকার একশো শতাংশ কাজ করে দেওয়ার দাবিদার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তিনবারের তারকা সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের শতাব্দী রায় চতুর্থবারের জন্য এবারও তাঁর পুরনো কেন্দ্র বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন৷ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করার আগেই শতাব্দী রায় যে পুনরায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো৷ সে জন্য তিনি দিল্লিতে সংসদের অধিবেশন ছাড়া অধিকাংশ সময়টাই তাঁর নির্বাচন ক্ষেত্রে কাটিয়ে আসছেন৷ বিগত ১৩ এপ্রিল কলকাতার বিগ্রেডে দলের জনগর্জন সমাবেশ থেকে দলের অন্য প্রার্থীদের সাথে শতাব্দী রায়ের নামও চতুর্থবারের প্রার্থী হিসেবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পরই শতাব্দী রায় স্বামী মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বীরভূমে চলে আসেন এবং শুক্রবার ১৬ মার্চ তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়ে ভোট প্রচারে নেমে পড়েন৷ তিনি তাঁর লোকসভা এলাকার বিধানসভা ভিত্তিক সাংসদ তহবিলের টাকায় কী কী উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার হিসাব সামনে নিয়ে আসেন স্বামী মৃগাঙ্ককে পাশে বসিয়ে৷ তিনি জানান, একজন সাংসদ প্রতি বছর তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিলে প্রতি বছর পাঁচ কোটি টাকা করে পান৷ গত পাঁচ বছরে তিনি তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিলে যে ১৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন তা খরচ করতে পেরেছেন৷ অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে মাত্র ২২৩ টাকা৷ তারপরও বেশকিছু এলাকায় সাংসদ তহবিলের টাকায় সঠিকভাবে কাজ না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আমি আমার কাজ করেছি৷ তারপরেও অভিযোগ শুনবো কেন?
কিন্ত্ত এবার সেই এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি বলে অভিযোগ শোনার সাথে সাথে এলাকায় গিয়ে রীতিমতো গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হলো শতাব্দী রায়কে৷ তিনি তাঁর নির্বাচনক্ষেত্র মহম্মদবাজারের পুরাতন গ্রাম, লাউজোড়া গ্রামে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন এখানকার হাসপাতালে একজন ফার্মাসিস্ট পর্যন্ত থাকেন না বলে অভিযোগ শুনতে হয়৷ গ্রামের কনেজা বিবি সরাসরি অভিযোগ করেন, আবাস যোজনার বাড়ি থেকে শুরু করে সরকরি কোনও সাহায্য তাঁরা পাননি৷ আবাস ষোজনার বাড়ি পাবার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন টাকা নিয়েছে৷ তাই এবার ভোট দিত গেলে নগদ টাকা হাতে না পেলে ভোট দিবেন না বলে জানিয়ে দেন শতাব্দী রায়কে৷ যা নিয়ে চরম অস্বিতে পড়েন শতাব্দী রায়৷ একইভাবে শনিবার ১৩ এপ্রিল শতাব্দী রায় নলহাটি–২ নম্বর ব্লকের নওয়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোকুলপুর গ্রামে পৌঁছতেই গ্রামের মানুষ তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ বিগত দশ বছর ধরে গ্রামের রাস্তা পাকা করার কথা বলা হলেও তা হয়নি৷ গ্রামের ভাঙাচোরা রাস্তা এখনও কাদায় ভর্তি৷ গ্রামবাসীরা জানিয়ে দেন, ওই কাদা রাস্তায় শতাব্দী রায়কে হাঁটতে হবে৷ অন্যথায় তাঁকে আটকে রাখা হবে৷ গ্রামের হামিদা বিবি অভিযোগ করেন, আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার কথা বলে গ্রামের তৃণমূল কংগ্রেসের ছেলেরা তাঁর কাছ থেকে ২০০ টাকা নেয়৷ অথচ তাঁরা একটা ঘরও পাননি৷ জোটেনি একটি ত্রিপলও৷ শেষ পর্যন্ত ভেটোর পরে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়ে কোনক্রমে রেহাই পেয়ে গ্রাম ছাড়েন তারকা সাংসদ শতাব্দী রায়৷