কেন্দ্রের বিভিন্ন দপ্তরের অসহযোগিতার কারণে রাজ্যের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সোমবার নবান্নের বৈঠকে কার্যত এভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিসংখ্যান তুলে ধরে নিজের বক্তব্যকে আরও দৃঢ় করলেন মমতা। সম্প্রতি বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের কাজে প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগগুলির তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ১৫৫ জন ঠিকাদার, ১৯ জন ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ করা হয়েছে।
সোমবার বিধানসভায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী-সহ একাধিক সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা। এছাড়াও ছিলেন বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকরা। এই বৈঠকেই কোন অঞ্চলের জল সরাবরাহ পরিষেবায় কী সমস্যা, তা নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি মমতা খতিয়ে দেখেন, পিএইচই দপ্তর জলের অপব্যবহার নিয়ে কতটা অ্যাকশন নিচ্ছে। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল না পৌঁছানোয় মমতা এদিন রেল, ডিভিসি সহ কেন্দ্রের একাধিক দপ্তরকে তোপ দাগেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘কল আছে, পাইপ আছে কিন্তু জল নেই। ভোটের সময় কেন্দ্র বলে ঘরে ঘরে জল দিচ্ছে। আসলে এই প্রকল্পে কেন্দ্র ১০ শতাংশ দেয় আর রাজ্য দেয় ৯০ শতাংশ টাকা।’ পানীয় জলের অপব্যবহার প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘কেন ইঞ্জিনিয়াররা দেখেনি? কেন বিডিও ডিএমরা দেখেননি? এসডিওরা দেখেননি? কার ভয়ে? আমি পরিষ্কার বলছি, কোনও নেতার কথা শুনবেন না, কোনও রাজনৈতিক দলের কথা শুনবেন না। কোনও পুলিশ আপোস করবেন না। বিডিও ডিএম এসডিওরা আপোস করবেন না। যদি কেউ কারও ভয়ে আপোস করেন তাহলে আমি তাঁর চাকরি আগে খাবো।’ সোমবারের বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, প্রায় ১৯ হাজার বেআইনি সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি ৪৪১টি এফআইআর করা হয়েছে।
এদিন মমতা আরও বলেন, ‘পাইপে যতক্ষণ না জল যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। কোটি কোটি টাকা দিয়ে জমি কিনতে হয়। ভোটের আগে বলবে ঘর ঘর পানি, আর এদিকে আমাদের নিজেদের টাকা দিয়ে সব কাজ করতে হয়। কেউ যেন না ভাবে রাজ্য সরকার তার নিজের সম্পত্তি।’ মমতার অভিযোগ, জলের পাইপ কেটে রাস্তার মাঝখান থেকে কেউ কেউ নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। এই ঘটনা ঠিক নয় বলে এদিন দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।