ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব, বন্যা ইস্যুতে হুঁশিয়ারি মমতার

বুধবারের পর ফের বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি পাঁশকুড়া এবং রাতুলিয়ার একাধিক এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর যান হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে। ডিভিসি এত পরিমাণ জল ছাড়ার কারণে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আগে কোনও দিন এত বেশি পরিমাণ জল ছাড়া হয়নি বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী দিনে তিনি ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেবেন বলে জানান। এছাড়াও এনিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন মমতা। জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি প্রত্যাহার না করায় বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি তো আমার সাধ্যমতো করেছি।’

বুধবারের পর বৃহস্পতিবারেও ফের বাংলার বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ বললেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিন মমতা বলেন, ‘ডিভিসি প্রায় চার লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে। জীবনে যা কোনও দিন হয়নি। ডিভিসির জলধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩৬ শতাংশ। কেন কেন্দ্রীয় সরকার ড্রেজিং করবে না? ডিভিসির জলে কেন বাংলা ডুববে? আমরা কৈফিয়ত চাই। ভুটান থেকে জল ছাড়ার ফলে উত্তরবঙ্গ ভেসে যায়। বাংলায় জল ছেড়ে দিয়ে ঝাড়খণ্ডকে নিরাপদ রাখে। এটা তো ঠিক নয়। বাংলা একটা নৌকার মতো। ‘

মমতা এদিন সকলে অন্তত ২দিন নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য অনুরোধ করেন। জল নেমে গেলে বাড়িতে ফেরার পরিস্থিতি থাকলে তবেই ফেরার পরামর্শ দেন তিনি। বন্যা কবলিত মানুষদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেন মমতা। যাদের ফসল নষ্ট হয়েছে তাঁদের শস্যবিমার টাকা প্রদানের কথাও ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি যাদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে তাঁদের নামের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।


উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির জেরে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে জল। এর জেরে হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বর্ধমান সহ আরও বেশ কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়। বুধবার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হাওড়া, হুগলির বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তারপর যান ঘাটালে। বৃহস্পতিবার ফের তাঁকে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে দেখা গেল।

উদয়নারাণপুরে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে মমতা বলেন, ‘ডিভিসি কত জল ছেড়েছে তা জানাচ্ছে না। কোনও দিন এটা হয়নি। আমি ডিভিসির চেয়ারম্যানকে ফোন করেছিলাম। অনুরোধ করেছিলাম, এত জল ছাড়বেন না। হেমন্ত সোরেনকে ৩ বার ফোন করে অনুরোধ করেছি। সবচেয়ে বেশি ছেড়েছে ডিভিসি। কোনও হিসাব নেই। ৫ লাখ পুকুর কেটেছি। ৫০০ চেক ড্যাম্প করেছি। তাও জল ঢুকছে। কালকে বীরভূমের জেলাশাসক, বিধায়করা ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছেন।’ মমতা এদিন জানান, আমরা ৫০ লক্ষ পাকা বাড়ি তৈরি করেছি কিন্তু বাংলায় এখনও ৫০ লক্ষ মাটির বাড়ি আছে। ৩ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেয় না। বাড়ি তৈরিতে তিনি কোনও বৈষম্য চান না বলেও জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তারদের বলব, এই জল কমে গেলে, সাপে কামড়, ডায়ারিয়া, জ্বর এগুলো হবে। ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল ক্যাম্প করার জন্য মুখ্যসচিবকে বলেছি। কিন্তু মেডিক্যাল ক্যাম্প যে করব, এখনও পর্যন্ত তো কাজে যোগদান হয়নি। আমি তো আমার সাধ্যমতো করেছি। এর থেকে বেশি আমার আর কিছু বলার নেই। বন্যায় মানুষ আক্রান্ত। এই সময়টা রাজনীতির সময় নয়। সামনে পুজো। প্যান্ডেলগুলোতেও জল ঢুকে গিয়েছে। সব জেলায় প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছি।’ বৃষ্টির জন্য এই বন্যা হয়নি বলে এদিন অভিযোগ করেন মমতা। ঝাড়খণ্ডকে সুরক্ষা দিয়ে বাংলাকে ডোবানো প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘আমার জনগণের জীবন দিয়ে আপনাদের সুরক্ষা দিতে পারি না। ৩ দিন ঝাড়খণ্ডের বর্ডার বন্ধ থাকবে। ডিভিসির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করব। দিস ইস টু মাচ।’