• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর

শিক্ষক দিবসের দিনে নাম না করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমলােচনায় মুখর হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

শিক্ষক দিবসের দিনে নাম না করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমলােচনায় মুখর হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন সমাজগঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে আলােচনা করেন। বলেন, টাকা দিয়ে শিক্ষকদের ঋণ শােধ করা যায় না। দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের কাছে গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার শিক্ষকদিবস উপলক্ষে নেতাজি ইনডাের স্টেডিয়ামে আয়ােজিত এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার এরাজ্যের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষকদের স্বাক্ষায় রাজ্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাঁর অভিযােগ, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ইতিহাসকে বদলে দিতে চাইছে। ইতিহাস থেকে মনীষীদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টাকা দিয়ে শিক্ষকদের ঋণ শােধ করা যায় না। তাঁর কথায়, তিনজনকে মানুষ কখনও ভােলে না। এরা হলেন বাবা-মা ও শিক্ষক। পাশাপাশি সরকারের তীব্র আর্থিক সংকটের প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত আটবছরে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই বছর আমাদের ৫৫ হাজার কোটি টাকা শোধ করতে হয়েছে। দেনা শােধ করতে গিয়ে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হয়ে যাচ্ছে একথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, অথচ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দু’বছর চালানাের পরেই এগুলি বন্ধ করে দিচ্ছে কেন্দ্র। বাধ্য হয়ে সেই প্রকল্পগুলি এখন আমাদেরই চালাতে হচ্ছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্র আর্থিক সংকটে পড়লে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। মমতা রীতিমতাে চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, গত আটবছরে রাজ্য সরকার যে কাজ করেছে, সেটা অন্যরা আশি বছরেও করে দেখাতে পারবে না। আত্মবিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আগে বাংলাকে ছাগলের তৃতীয় সন্তান বলা হত। দিল্লিতে যেখানে যেতাম সমালােচনার মুখে পড়তে হতাে। সব কিছুতেই বাংলার স্থান ছিল ২২ থেকে ২৪ নম্বরে। অথচ সেই বাংলা এখন সব কিছুতেই একনম্বরে। আজকে বাংলা সারা দেশের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে অন্যতম মডেল। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথাও তিনি তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষকদের কাছে।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমাদের টাকা নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ থেকে কর তুলে নিতে হুড়ছে না। এদিকে এর বিনিময়ে আমাদের সামান্য টাকা দিচ্ছে। তবুও এই আর্থিক টানাটানির মধ্যেই বাংলার মানুষের জন্য রেশনে দু’টাকা কিলাে দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থাতে কি করে কন্যাশ্রী, সাইকেল, দু’টাকা কিলাে দরে চাল, স্বাস্থ্যসাথী এত ধরনের প্রকল্পের কাজ চালানাে যাবে বলেও প্রশ্ন তােলেন মমতা ।

সরকারি কর্মীদের পেনশনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারসহ বিভিন্ন রাজ্য সরকার পেনশনপ্ৰথা তুলে দিয়েছে। কিন্তু এই রাজ্যেই একমাত্র পেনশন, গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বাম আমলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আগে শিক্ষকদের বেতন পেতে মাসের বেশ কিছুদিন পেরিয়ে যেত। কিন্তু এখন শিক্ষকরা এক তারিখের মধ্যেই বেতন পেয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষকদের বদলি নীতির বিষয়টি আরও শিথিল করতেও শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বদলির বিষয়টি সরলীকরণ হলে শিক্ষকদের সুবিধা হবে। যেখানে শিক্ষকের তুলনায় কম ছাত্র রয়েছে কিম্বা যেখানে ছাত্রের তুলনায় বেশি শিক্ষক রয়েছে সেইসব ক্ষেত্রে বদলির বিষয়টি চালু করা যায় কিনা, এদিন শিক্ষামন্ত্রীকে সেই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিনের অনুষ্ঠানে ৬২ জন শিক্ষকের পাশাপাশি সদ্য তৃণমূলে যােগ দেওয়া ওমপ্রকাশ মিশ্রকে শিক্ষারত্ন সম্মান প্রদান করা হয়। এছাড়া ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী।