পিতৃপক্ষের অবসানের পর দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে গিয়েছে। মহালয়ার এই পূণ্য লগ্নে যেখানে সর্বত্র খুশির বাতাবরণ, সেখানে রানাঘাটের অভিযান সংঘের সদস্যের মনে বিষাদের ছায়া। কারণ দীর্ঘ পরিকল্পনা, দীর্ঘ প্রস্তুতি, দীর্ঘদিনের পরিশ্রম যেন শুরুর আগেই এক লহমায় শেষ হয়ে গেল। আইনি জটিলতার জেরে শেষেমেশ ১১২ ফুটের দুর্গাপুজো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল রানাঘাটের অভিযান সংঘ।
মামলা লড়ার টাকা নেই। সেই কারণেই এ বছর পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের। শুরু থেকেই উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ছিল, বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গাপ্রতিমা নির্মাণ করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেবেন। পরিকল্পনা মতো সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু পুজোর আগেই বাধ সাধল আইনি জটিলতা। একেই পুজোর খরচ, তার উপরে মামলা লড়ার মতো সামর্থ্য নেই পুজো উদ্যোক্তাদের। তাই দেবীপক্ষের সূচনার দিনই পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল রানাঘাটের অভিযান সংঘ।
শুরু থেকেই অভিযান সংঘের ১১২ ফুটের দুর্গাপ্রতিমা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি জানানো হয়। যা নিয়ে মামলা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। এই মামলায় নদিয়ার জেলাশাসকের তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়, এই পুজো নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিদ্যুৎ দপ্তর, দমকল, পুলিশ, বিডিও এবং রানাঘাটের মহকুমা শাসকের। বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে খবর, পুজো কমিটি প্রতি দিন ৩ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচের কথা জানিয়েছে। কিন্তু প্যান্ডেলের আয়তন অনুযায়ী অন্ততপক্ষে ২০-২৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলেই এই পুজোয় আপত্তি জানায় বিদ্যুৎ দপ্তর।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের পুজো এবং জমির অনুমতিপত্র জমা করা হয়নি বলেই এই পুজো নিয়ে আপত্তি তোলে দমকল ও জরুরি বিভাগ। শেষমেশ নদিয়ার জেলাশাসকের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, বিভিন্ন দপ্তরের আপত্তির কারণেই ১১২ ফুটের প্রতিমা স্থাপন এবং দর্শনে অনুমতি দেওয়া যাবে না।
৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট নদিয়ার জেলাশাসককে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ বলেন, ১১২ ফুটের প্রতিমা ১৩৪ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে দর্শন করার অনুমতি দেওয়া যায় কি না, তা জেলাশাসকের বিবেচনা করা উচিত। ৩ অক্টোবর ফের এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের।
এ বিষয়ে এক পুজো উদ্যোক্তা বলেন, এই পুজোর পিছনে গোটা গ্রামের মানুষের পরিশ্রম রয়েছে। গ্রামের ছেলেমেয়েরাই এই পুজোর যাবতীয় কাজে হাত লাগিয়েছেন। পুজোর পিছনে খরচ হওয়া প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা গ্রামবাসীদেরই টাকা। পুজোর এই বিপুল খরচের ধাক্কা সামলানোর পর আদালতে মামলা লড়ার মতো আর সামর্থ্য গ্রামবাসীদের নেইয তাই বাধ্য হয়ে মহালয়ার সকালেই পুজো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন পুজো উদ্যোক্তারা।