গ্রামেরই চারজন দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দু’দিন নিখোঁজের পরে তার খোঁজ মেলে। জানা যায়, মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রামের এক যুবক তাকে ধর্ষণ করে। বাকি তিনজন এ কাজে ওই যুবককে মদত দেয়। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে মেয়েটির সিঁথিতে সিঁদুরও পরিয়ে দেওয়া হয়।
মূল অভিযুক্ত যুবক সহ তিনজনকে পুলিশ আটকও করে। কিন্তু শুক্রবার রাতে তাদের মধ্যে দু’জনকে ছেড়ে দিলে, তারা গ্রামে ফিরে মেয়েটিকে হুমকি দেয় বলে অভিযােগ। এই হুমকি ও সামাজিক ও লােকলজ্জায় শনিবার নিজের বাড়িতে গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য এবং উত্তেজনা ছড়ায় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা থানার মণীন্দ্রনগর গ্রামে। এলাকাটি মাড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। বেলডাঙ্গা শ্রীশচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির এই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। তবে দেহ উদ্ধার করতে এসে গ্রামের মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েন ওসি জামালউদ্দিন মণ্ডল।
মৃত ছাত্রীর বাবা হাটে ঘুরে ঘুরে চারা গাছ বিক্রি করেন। মধুমিতারা তিন বােন। অভাবের সংসার। মেয়ের দেহ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা। কথা বলার মতাে পরিস্থিতিতে ছিলেন না।
ছাত্রীর জ্যেঠিমা বলেন, গত ১০ নভেম্বর টিউশনি পড়ে বাড়ি ফেরার সময় তাকে গ্রামেরই যুবক মনু মণ্ডল এবং তার বাবা শক্তি মণ্ডল তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এ কাজে তাদের সাহায্য করে গ্রামেরই আরও দুই বাসিন্দা অমর বিশ্বাস এবং ভােলা বিশ্বাস। দু’দিন মেয়ের কোনও খোঁজ না পেয়ে থানায় নিখোঁজের অভিযােগ দায়ের করা হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে ওই ছাত্রীকে পলাশীতে শক্তি মণ্ডলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে জোর করে ধর্ষণ করেছে মনু মণ্ডল। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে ছাত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেয় মনু। পুলিশ অভিযােগ পেয়ে মনু, তার বাবা এবং অমর বিশ্বাসকে আটক করে। কিন্তু শুক্রবার রাতে মনুকে থানায় আটকে রেখে বাকি দুজনকে ছেড়ে দেয়। দু’জন ছাড়া পেয়েই ওই ছাত্রীকে হুমকি দিতে থাকে। অমরের মা তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তার চরিত্র নিয়ে কটু কথা বলে। একদিকে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যাওয়া এবং অন্যদিকে লোক ও সামাজিক লজ্জায় শেষ পর্যন্ত সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যারা ওকে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য করল, তাদের ফাঁসি চাই।
থানার ওসি মৃতদেহ উদ্ধার করতে যখন এসেছিল, তখন তাকে একথা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃতার প্রতিবেশী আনন্দ মণ্ডল এবং বিভাস মণ্ডল বলেন, পুলিশ যদি দু’জনকে ছেড়ে না দিত, তাহলে বােধহয় এই ঘটনা ঘটত না। কারণ তারা ছাড়া পেতেই গ্রামে ঢুকে মধুমিতাকে হুমকি দিয়েছিল। তাদের আত্মীয়-পরিজনরা তাকে কটু কথা বলেছিল। সামাজিক লজ্জা ও অপমানের ভয়েই শেষ পর্যন্ত ছাত্রীটি চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দাবি, অবিলম্বে বাকি তিনজনকেও পুলিশ গ্রেফতার করুক এবং চরম থেকে চরমতম শাস্তির ব্যবস্থা করুক।
তারা আরও বলেন, অভিযুক্ত বাবা এবং ছেলে রাজস্থানে থাকে। সেখানে কাজ করে। ঘটনা ঘটানাের কয়েকদিন আগে তারা গ্রামে ফিরেছিল। এলাকায় তারা বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।
যদিও থানার ওসি জামালউদ্দিন মণ্ডল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযােগ পাওয়ার পর আমরা যখন ছেলে এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করি, তখন মেয়েটি আমাদের জানিয়েছিল, তার বয়স আঠারাে হয়ে যাওয়ায় সে নিজের ইচ্ছাতেই বাড়ি ছেড়ে মনু মণ্ডলকে বিয়ে করে পলাশীতে থাকছিল। তা ছাড়া যে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনও লিখিত অভিযােগ মেয়েটির বাড়ির পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়নি। সন্দেহের বশে তাদের আটক করা হয়েছিল।