২২ নভেম্বর— দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিনিকেতনে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্ন ও শিক্ষা ভাবনা দিয়ে গড়া বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী কোনও উপাচার্য না থাকার ফলে, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দিয়ে বিশ্বভারতীকে চালাতে গিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রমশই ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর টেবিলে পড়ে রয়েছে বিশ্বভারতীর আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পুর্ণনিয়োগের বিষয়টি। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতীকে ইউনেস্কো যে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা দিয়েছে, তা বিশ্বভারতী ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে। এরই মধ্যে বিশ্বভারতীকে বিজেপি গৈরিকীকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের একাংশের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ২২ নভেম্বর শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর ‘লিপিকা’ প্রেক্ষাগৃহ প্রাঙ্গণে চরম হট্টগোল দেখা দেয়। বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের একাংশের ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে চরম অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ইতিপূর্বে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে ‘লিপিকা’ প্রেক্ষাগৃহে একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অশান্তির আশঙ্কায় ওই অনুষ্ঠানটি বিশ্বভারতীর শ্রীনিকেতনে করার ব্যবস্থা করলে সেখানেও অশান্তি দেখা দিয়েছিল।
ভারত সরকার বাংলা ভাষা-সহ যে সমস্ত ভাষাগুলিকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে, তা নিয়েই এদিন ‘লিপিকা’ প্রেক্ষাগৃহে ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউণ্ডেশন’-এর পক্ষ থেকে বিশ্বভারতীর ভাষা বিভাগের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ওই ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি বোলপুর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এক সময় পরাজিত হয়েছিলেন। বিশ্বভারতীর বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের একাংশ এদিন আলোচনা সভা শুরু হওয়ার আগেই ‘লিপিকা’ প্রেক্ষাগৃহের সামনে বিশ্বভারতীতে এই ধরনের আলোচনান সভার বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে চরম হট্টগোল বেধে যায়। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওই আলোচনা সভাটি অনেকখানি ম্লান অবস্থায় হয়। বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউণ্ডেশন’ বিজেপির একটি সংগঠন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিজেরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তাঁদের কোনও সমস্যা ছিলো না। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীতে বিজেপির লোক কেন আসবে? আমরা এটা চাই না।’’
অপর দিকে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন কোর্ট মেম্বার অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘আমি তো আমার বক্তব্যে অশোক মিত্র, হীরেন মুখোপাধ্যায়ের নাম নিয়েছি। এঁরা বামপন্থী ছিলেন, বিজেপি ছিলেন না। জ্যোতি বসু ফাউণ্ডেশন এখানে কোনও আলোচনা সভা করলে আমার আপত্তি থাকবে না। বিশ্বভারতী নিয়ে ১৯৫১ সালের মে মাসে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেশের উচ্চকক্ষে কথা বলেছিলেন। সব মানুষ, সব ধারার মানুষের এখানে বিচরণ হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদী বাংলা ভাষা-সহ পাঁচটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’ সেইসঙ্গে এদিন অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আরএসএস, বিজেপি তো সিমির মতো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। পারস্পরিক মতামত বিনিময় ও আলোচনায় তাহলে আপত্তি থাকবে কেন?’