একে চতুর্থী, তায় ছুটির দিন। ফলে মানুষের ভিড়ে বুধবার অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে শহর। গত ক’য়েক বছর ধরেই পুজোর তিথি অনুযায়ী পুজো প্যান্ডেলের ভিড়ের মধ্যে একটা ভেদাভেদ লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ তৃতীয়া বা চতুর্থীর ভিড়ের সিংহভাগ মানুষই শহরাঞ্চলের। আর ষষ্ঠী থেকে নবমীর ভিড় দখল করে নেয় শহরতলির দর্শনার্থীরা। ফলে চতুর্থীতে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ-সর্বত্র মানুষের ঢল। এর মধ্যে মানুষ যত না বেশি প্যান্ডেলমুখাে, তার চেয়ে ঢের বেশি বাজারমুখী। শেষ মুহুর্তের পুজোর সাজের কেনাকাটির জন্য শহরের বেশিরভাগ মানুষ বাইরে বেরিয়ে পড়েছে।
এর মধ্যে এদিন মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন উপলক্ষে ছুটি থাকায়, ভিড়ের চাপ বেড়েছে। ফলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা দায় হয়ে পড়েছে। শহরের বেশ কিছু মানুষ শহর কলকাতার উদ্বোধন হয়ে যাওয়া পুজোগুলাে দেখে ফেলতে চাইছে। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের পুজো মণ্ডপগুলিতে তাই উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড় সামলাতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের জেরবার অবস্থা।
এদিন প্রচণ্ড ভিড়ে এক তরুণীর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে যাকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রীর আলিপুর ব্রিজে ওঠার সময়। সেখানে যখন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি যাচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রী দেখেন, একজন তরুণী অসুস্থ বােধ করছে। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কনভয় থামাতে নির্দেশ দেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম। পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে উত্তর কলকাতায় টালা ব্রিজ বন্ধ থাকার কারণে যানজট সামলানাে দায় হয়ে পড়েছে। বাসগুলি পাইকপাড়া কিংবা চিড়িয়ামােড় দিয়ে ঘুরে শ্যামবাজার পর্যন্ত পৌঁছতে অতিরিক্ত এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় বেশি লাগছে। তবে চতুর্থীর দিন টালা ব্রিজের পাশে টালা বারােয়ারি আর টালা প্রত্যয়ের পুজো মণ্ডপের ঠাকুর দেখার জন্য লম্বা লাইন পড়েছে। পাইকপাড়া কিংবা চিড়িয়ামােড়ের ভেতরের রাস্তা দিয়ে অনেকেই টালা অঞ্চলের ঠাকুর দেখতে এসেছেন। শুধু কী ঠাকুর, দূর থেকে অনেকে দেখে নিয়েছেন মনমরা টালা ব্রিজটাকেও। একই অবস্থা দক্ষিণ কলকাতাতেও সেখানকার নামকরা পুজোমণ্ডপগুলিতেও ঠাকুর দেখতে মানুষ ভিড় করেছে। সে দৃষ্টিকোণের ত্রিধারা হােক কিংবা চেতলার অগ্রণী।
তবে পুজোতে এবারও সেই থিমের ছড়াছড়ি। মানুষের থিম নিয়ে কোন প্রকাশ্যে আগ্রহ নেই তবুও নজর কাড়ার মতাে থিমের তাে অভাব নেই যার জৌলুসেই মজেছেন মানুষ মুদিয়ালিতে মন্ডপ সেজে উঠেছে আপন সাজে যেখানে কাল্পনিক ও বিমূর্ত মােটিফ ও মূর্তির কাজ দেখার মতাে। তেমনি আবার যােধপুর পার্কে ফ্লাই অ্যাশের ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শিবের মন্দির। সেই মন্দিরেই কষ্টিপাথর রংয়ের দুর্গাকে দেখতে মানুষের প্রচুর আগ্রহ।
সুরুচি সংঘের এবছরের থিম উৎসব। দুশাে ফুট উঁচ মেঘের তলায় যেন মা দুর্গার তৈরি শামিয়ানা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সব শ্রেণির মানুষ। এগুলি গােগ্রাসে গিলছেন প্রতিমা দর্শনকারীরা। বেহালা ক্লাবের এবার বিষয় বস্তু যেহেতু প্রাণের পরবকথা, তাই গ্রামবাংলায় ঘটা করে পালিত উৎসবের মধ্যে টুসু, ভাদু, চড়ক, গাজনের কথা উৎসবের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায়, এগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে মানুষের সামনে।
বাঘাযতীন তরুণ সংঘের পুজো এবার থিম করেছে ‘এসাে মুক্ত করাে’। নদী ও জল বাঁচানাের বার্তা দিয়ে গঙ্গা বাঁচানাের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে থিম যাই হােক না কেন, চতুর্থীর রাতেও শয়ে শয়ে মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন এই সুন্দর দৃশ্যগুলির স্বাদ আস্বাদনের পাশাপাশি ঠাকুর দর্শনেও। ভয় একটাই পরে হয়তাে বরুণদেব পাছে ঠাকুর দেখার আনন্দটাই না মাটি করে দেন।