• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

সাংসদ হত্যায় কসাই জিহাদকে সাহায্যকারী সিয়ামের নাগাল পেতে নেপালে তদন্ত সিআইডি-র

কলকাতা, ২৯ মে:  নিউ টাউনের অভিজাত আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্কে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো এবং চুল আসলে কার দেহের অংশ? এই রহস্য উন্মোচনে তৎপর সিআইডি। সেজন্য সাংসদ কন্যা মুমতারিন ফিরদৌস ডোরিনকে ডেকে পাঠিয়েছে কলকাতা পুলিশ তাঁর ডিএনএ নিয়ে উদ্ধার হওয়া ওই মাংসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। যাতে ওই সাংসদের খুনের কিনারা করা যায়। সূত্রের খবর, আগামী

কলকাতা, ২৯ মে:  নিউ টাউনের অভিজাত আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্কে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো এবং চুল আসলে কার দেহের অংশ? এই রহস্য উন্মোচনে তৎপর সিআইডি। সেজন্য সাংসদ কন্যা মুমতারিন ফিরদৌস ডোরিনকে ডেকে পাঠিয়েছে কলকাতা পুলিশ তাঁর ডিএনএ নিয়ে উদ্ধার হওয়া ওই মাংসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। যাতে ওই সাংসদের খুনের কিনারা করা যায়। সূত্রের খবর, আগামী দুই দিনের মধ্যে কলকাতায় আসতে পারেন সাংসদ কন্যা ডোরিন।

গতকাল মঙ্গলবার নিউটাউনে আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালায় তদন্তকারী দল। নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্ক, বর্জ্য নিষ্কাশনের পাইপ থেকে মাংসের টুকরো এবং চুল উদ্ধার হয়। মাংসের গায়ে তখনও মাখানো ছিল হলুদ। সেই মাংস বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিমের দেহের অংশ কিনা এখনও জানা যায়নি। এই তথ্য পাওয়ার একমাত্র উপায়, উদ্ধার হওয়া ওই মাংসের টুকরোর ডিএনএ-র সঙ্গে সাংসদের দুই কন্যার কারও ডিএনএ মিলিয়ে দেখা। এছাড়া যেখানে দেহ টুকরো করা হয়েছিল, বা খুন করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে, নিউ টাউনের সেই সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটের পাইপ লাইনে রক্তের দাগ খুঁজে বের করে তার ডিএনএ পরীক্ষা করাও হতে পারে। কারণ, জিহাদের বয়ান অনুযায়ী, ওই ফ্ল্যাটে দেহ টুকরো করার পর রক্তের দাগ জল দিয়ে ধুঁয়ে দেওয়া হয়েছিল। জানা গিয়েছে, বাথরুমে দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলার পর ধুয়ে ফেলা রক্ত নিকাশি পাইপ দিয়ে নির্গত করা হয়। ইতিমধ্যে রক্তের সন্ধান পেতে আজ বুধবার অভিজাত ওই আবাসনের নিকাশি পাইপ খুলে নমুনা সংগ্রহ করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।

বাবার মৃতদেহ খুঁজে পেতে বা মৃত্যু রহস্যের হদিশ পেতে উদগ্রীব কন্যা মুমতারিন ফিরদৌস ডোরিনও। তিনি মূলত ঢাকায় থাকেন। সম্প্রতি এই ঘটনার পর ঢাকা থেকে ফিরে ঝিনাইদহের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করেন সাংসদ কন্যা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাঁর বাবার দেহ উদ্ধারের বিষয়ে কাতর আবেদন জানান। এদিকে দুইদিন আগেই কলকাতায় এসে ঝিনাইদহের সাংসদ খুনের তদন্ত করছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদ। তিনি কলকাতায় এসেই রবিবার নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে যান। বাংলাদেশ গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে ছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন একটি তদন্তকারী দল। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি আধিকারিকরাও। হারুন দাবি করেন, আনোয়ারুলকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, সাংসদের দেহাংশ না মিললে তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না। এজন্য তিনি রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি-কে নতুন কিছু জায়গায় তল্লাশি চালানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এখনও অধরা এই খুনের মাস্টারমাইন্ড ও বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান। তার খোঁজে এবার কাঠমান্ডু হানা দিতে পারে সিআইডি। সূত্র মারফত এমনই সম্ভাবনার কথা জানা গিয়েছে। পাশাপাশি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি দেহ টুকরো করতে কসাই জিহাদকে সাহায্যকারী সিয়ামও। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে এখনও এই দুই মূল অভিযুক্তের হদিশ পায়নি। বাংলাদেশ গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ মে আখতারুজ্জান বিমানে ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে নেপালে গিয়েছে। সেখান থেকে দুবাই অথবা আমেরিকাতে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে। গোয়েন্দাদের আরও ধারণা, আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি থেকে নেপালের রাজধানী শহর কাঠমান্ডু যেতে পারে সিয়ামও। সেজন্য তদন্তকারী সংস্থা এদের তল্লাশিতে কাঠমান্ডুতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেখানে এদের দুজনের কেউ গা ঢাকা দিয়ে আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখবে পশ্চিমবঙ্গের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।

এদিকে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে, খুনের পরই কলকাতা থেকে নেপালে গিয়েছে আখতারুজ্জামান। সেখান থেকে দুবাই অথবা আমেরিকাতে যেতে পারে। সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চাইছে সিআইডি। তাছাড়া খুনের পর টুকরো করা মৃতদেহগুলি খুঁজে বের করা এখন গোয়েন্দাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ সেটা না করতে পারলে এই খুনের মামলার অভিযোগ শিথিল হয়ে যাবে। সেজন্য দেহ কোথায় ফেলা হয়েছিল, তা জানতে সিয়ামকে গ্রেফতার করা জরুরি। কারণ তাকে জেরা করে খুনের আরও অনেক অজানা রহস্য সামনে আসতে পারে। বিশেষত দেহ লোপাটের ব্যাপারে এমন কিছু তথ্য হয়তো সিয়ামের কাছে রয়েছে, যা গ্রেপ্তার হওয়া কসাই জিহাদ সহ বাকি চারজনের কাছে নেই। সেজন্য দেহ উদ্ধারের আগে মরিয়া হয়ে সিয়ামকে খুঁজছে দুই দেশের গোয়েন্দারা। সিয়াম কোন রুটে পালিয়েছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে সিআইডি ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।