নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের কলেরা এবং ডেঙ্গির প্রকোপ শহর কলকাতায়! বর্ষা আসতেই কলকাতায় ছড়ালো কলেরার আতঙ্ক, বাদ গেলো না ডেঙ্গিও। বাগুইআটির জ্যাংড়ায় কলেরা আক্রান্ত হয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। বিধাননগর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। বমি ও পেটের সমস্যা নিয়ে রবিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষায় ভিব্রিও কলেরি পজিটিভ ধরা পড়ে বলেই হাসপাতাল সূত্রে খবর। এরপরই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। এখানেই শেষ নয়, তাঁর মায়ের শরীরেও একই ধরনের উপসর্গ মিলেছে। এরপরই বৃহস্পতিবার সকালে রোগাক্রান্তদের ফ্ল্যাটে আসেন নাইসেডের কর্মীরা। জলের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। তবে ঠিক কি উপসর্গ দেখা গিয়েছিল যুবকের দেহে? গত রবিবার থেকেই লাগাতার বমি, পেট খারাপে ভুগছিলেন তিনি। মাত্র ১০ মিনিটে ২৫-৩০ বার শৌচালয়ে যেতে হয় তাঁকে! সঙ্গী হয়েছিল অসহ্য পেটের যন্ত্রণা। রবিবার রাতেই ওই যুবককে বেলেঘাটা আইডিতে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁর কিডনির সমস্যা ধরা পরে। একাধিক পরীক্ষাও করা হয়। সেই নমুনা নাইসেডেও পাঠানো হয়েছিল। এদিন সেই রিপোর্ট আসে। দেখা যায়, তাতে ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে।
অন্যদিকে, ওই যুবকের মায়েরও একই উপসর্গ রয়েছে। বুধবার রাত থেকে তাঁর পেটে ব্যথা, বমি ও বার বার শৌচালয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে। এর পরই বৃহস্পতিবার নাইসেডের আধিকারিকরা তাঁদের আবাসনে আসে। পানীয় জল, শৌচালয়ের নমুনা সংগ্রহ করে। পাশাপাশি যুবকের মাকেও হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। এলাকায় আর কেউ কলেরা আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, খোঁজ নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। স্থানীয়দের দাবি, দিন দশেক আগে আক্রান্ত যুবকের আবাসনের আরও এক বাসিন্দারও একই উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। বর্ষার আগমন হতেই কলকাতা তথা রাজ্যে কলেরা আক্রান্তের হদিশ মেলায় চিন্তা বেড়েছে স্বাস্থ্য মহলের। অন্যদিকে, বর্ষার হাত ধরে ফিরল ডেঙ্গি-আতঙ্কও। ৭ দিনে রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ১২৯ জন। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ২৬ জুন পর্যন্ত রাজ্যে ১ হাজার ৩২৮ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গি সবথেকে বেশি থাবা বসিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। সেখানে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৬ জন। দু’নম্বরে মালদা, সেখানে ১৭৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। মুর্শিদাবাদে মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত ১৫৩ জন। হুগলিতে সংখ্যাটা ১৪৫ ছুঁয়েছে। শহর কলকাতায় চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ১১৩ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক, প্রায় ১ লক্ষ ৭ হাজার জন। যা ভেঙে দিয়েছিল গত ১২ বছরের রেকর্ডও। এবার পরিস্থিতি কী হয়, তা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য কর্তারা। মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে প্রায় ২১ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি কলেরা প্রতিরোধেও তৎপর হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।