বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং সাংস্কৃতিক চিত্রায়নের মাধ্যমে কলকাতার রেড রোডে পূর্ণ মর্যাদায় রবিবার পালিত হল ৭৬তম ‘সাধারণতন্ত্র দিবস’। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ধ্বনিত হল দেশাত্ববোধক গানের লাইন, ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ।’ সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে এটি এক গর্বের দিন। এই বিশেষ দিনে আমাদের সকলকে সংবিধানের মূল ভিত্তি অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সর্বোপরি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো অক্ষুন্ন রাখার শপথ নিতে হবে। এই ধাত্রীভূমিকে স্বাধীনতার মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন যাঁরা, সেই সকল বীর শহিদদের বিনম্র চিত্তে প্রণাম।’
সেই সঙ্গে সমাজমাধ্যমেও এদিন মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘প্রজাতন্ত্র দিবসের মাহেন্দ্রক্ষণে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব আম্বেদকর-সহ সকল সংবিধান রচয়িতাকে। শপথ হোক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপন এবং সর্বধর্মসমন্বয়ের পরম্পরার, মহান ঐতিহ্যের সুদৃঢ় বন্ধনকে অটুট রাখা। আমাদের প্রজাতন্ত্রের শক্তি জনগণের শক্তিতে প্রতিফলিত হোক।’
প্রথামাফিক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এদিন অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রাজ্যপাল। সেনাবাহিনীর বায়ু, স্থলবাহিনী ও সামরিক বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন রাজ্যপাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী। এরপর প্রদর্শনীতে থাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শৌর্যের প্রতীক সমরাস্ত্র পিনাক, মাল্টি ব্যারল রকেট লঞ্চার, সেনার অত্যাধুনিক গাড়ি রণজিৎ, রণবিজয়, ঐরাবত। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভারতীয় সেনার ‘রোবট সারমেয়’ বা ‘মাল্টি ইউটিলিটি লেগড ইকুইপমেন্ট’ (মিউল)। সঞ্জয় নামে ওই রোবট সারমেয়দের কসরত মন জয় করে সকলের। প্যারা স্পেশাল ফোর্স কমান্ডো বাহিনী রেড ডেভিলস, রাজপুতানা রাইফেলস থেকে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল, রাজ্য পুলিশের মহিলা ৱ্যাফ, বাইক আরোহী উইনার্স টিমের কুচকাওয়াজ নজর কাড়ে।
প্রসঙ্গত, এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল সেন, সাংসদ জুন মালিয়া, কীর্তি আজাদ-সহ রাজ্যের মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনিক কর্তারা। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা। মহড়ায় আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করেন জঙ্গলমহলের পড়ুয়ারা। আলিপুরদুয়ারের চা-বাগানের শিল্পীরা নৃত্যানুষ্ঠান করেন। বাদ পড়েনি সুন্দরবনও।
এক কথায়, রাজ্য সরকার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের ছত্রে ছত্রে ছিল বহুত্বের বার্তা।