পশ্চিমবঙ্গকে দেশের শীর্ষ শিল্পকেন্দ্র বানানোর লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে এই লক্ষ্যের দিকে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে, যা রাজ্যের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য সরকার বিনিয়োগ বাস্তবায়ন এবং শিল্প স্থাপনার প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করতে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বিনিয়োগকারীদের সহায়তার জন্য একটি বিশেষ সমন্বয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি রাজ্যে শিল্প স্থাপনা, বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন যে পশ্চিমবঙ্গ একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং ধর্মঘটমুক্ত রাজ্য, যেখানে শিল্প স্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে।
সম্মেলনে ৪০টি দেশের ২০০-র বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি রাজ্যে বিনিয়োগের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি রাজ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেন। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি, সবুজ শক্তি এবং পরিকাঠামো খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০৩০ সালেরমধ্যে এই প্রকল্পগুলো প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেএসডব্লিউ গ্রুপ রাজ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দুটি ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। অম্বুজা-নেউটিয়া গ্রুপ আগামী পাঁচ বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। আরপি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপ শক্তি, পরিকাঠামো এবং শিক্ষা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কয়লা খনি দেউচা-পাঁচামি প্রকল্পেও বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রকল্প রাজ্যের শক্তি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি চর্মশিল্প খাতে প্রায় ৪ লক্ষ কর্মসংস্থান এবং বিভিন্ন শিল্পপার্কে লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর এবং স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই খাতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগ (এমএসএমই) খাতে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক করিডর প্রকল্প এবং মহিলাদের ক্ষমতায়ন উদ্যোগ রাজ্যকে বিনিয়োগের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে। শিল্প স্থাপন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলাকে দেশের শীর্ষ শিল্পকেন্দ্রে পরিণত করার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সরকার প্রতিটি পদক্ষেপে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে রাজ্যে শিল্প ও কর্মসংস্থানের অগ্রযাত্রা শুধু পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে নয়, গোটা দেশের অর্থনীতিকে নতুন দিশা দেবে।