‘বুলবুল’ ঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবন পরিদর্শনে আসছে কেন্দ্রের সমীক্ষক দল। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমীক্ষকরা সােমবার থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বুঝতে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন সময়মতাে পৌঁছে দিতে কোন বিভাগ কীভাবে কাজ করবে, তা সােমবার দুপুরে কাকদ্বীপ স্টেডিয়ামে বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন সকালে আকাশ পথে সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা ও বকখালি অঞ্চল ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃত কাকদ্বীপের বাসিন্দা সঞ্জয় দাসের স্ত্রীর হাতে এদিন দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। পেশায় মৎস্যজীবী ট্রলার থেকে ঝড়ের সময় সঞ্জয় পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়। সঞ্জয়ের স্ত্রী এদিন কাকদ্বীপে আসেন দুই সন্তানকে নিয়ে। শিশু সন্তানদের কোলে তুলে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সদ্য স্বামীহারা তরুণী স্ত্রীকে আশ্বাস দেন জেলাশাসক চেষ্টা করবেন তাকে একটি কাজ দেওয়ার। জানান প্রশাসন পাশে আছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন জেলার সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী ও জেলা সভাধিপতি ও আধিকারিকদের নিয়ে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, রাজ্য প্রশাসন থেকে যেমন একটি টাস্ক ফোর্স সবকিছু তদারকি করবে, তেমনই জেলাশাসক ও জেলা সভাধিপতির নেতৃত্বেও টাস্ক ফোর্স কাজ করবে। তাতে থাকবেন সাংসদ, বিধায়ক, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এমনকি, দুর্গাপুজো কমিটি ও সংগঠনের কর্মীরাও। মমতা বলেন, ত্রাণ হিসেবে চাল, শুকনাে খাবার, বেবি ফুড, মুড়ি, চিড়ে, বিস্কুট, ওষুধ, যা দেওয়া হবে, তা যেন মেয়াদ উত্তীর্ণ না হয়।
বিধ্বস্ত সুন্দরবনকে আবার ঠিকঠাক করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে সেচ, কৃষি, মৎস্য, হর্টিকালচার, বিদ্যুৎ ও পঞ্চায়েত দফতর সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। প্রতিটি বিভাগের কর্মীরা কাজে এগিয়ে এলেও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মধ্যে এনে সাধারণ মানুষকে দিয়ে কাজ করাতে হবে। এর ফলে কিছু মানুষ এই সময়ে কাজ পাবে বলে বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
জানা গেল, এখন ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করলে ১৯০ টাকা দিন প্রতি পাওয়া যায়। শুধু বিধ্বস্ত এলাকায় নয়, এর সঙ্গে এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাখার কথা বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকদের মনে করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এলাকার আইসিরাই সরকারের প্রথম মুখ। কোনও রকম গণ্ডগােল-অশান্তি যেন না হয় খেয়াল রাখতে হবে। পানীয় জলের সংকট মেটাতে জল তৈরির গাড়ি পাঠানাে হবে। জল ধরাে জল ভরাে প্রকল্পে যুক্তরাও শামিল হবে। এলাকার পুকুর পরিষ্কার রাখতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি আকাশপথে দেখেছেন চাষের খেত পুরােপুরি জলের তলায়। গাছপালা সব ভেঙে পড়েছে। উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি। বাচ্চারা অনেকে সেই ভাঙা ডালের উপর বসে। পড়ে থাকা ছেড়া বিদ্যুতের তারের পাশে খেলছে। এর থেকে বিপদও হতে পারে। এলাকার পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি যােগাযােগ করার চেষ্টা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। জলের মধ্যে পড়ে থাকা পাকা ধানের কিছু ব্যবস্থা করা যায় কিনা, রিসার্চ টিমকে দেখতে বলবেন। সার্ভে রিপাের্ট যেমন সব দফতর দেবে, তেমনই দূষণ পর্ষদ দেখবে ঝড়ের কারণে কোথাও দূষণ ছড়াচ্ছে কিনা। দেখতে হবে, এই সময়ে সাপের কামড়েও কেউ মারা যাচ্ছে কিনা। সাপে কামড়ালে তার জন্য প্রয়ােজনীয় সব ব্যবস্থা থাকছে কিনা।
বৈঠক থেকে কাকদ্বীপ স্টেডিয়ামে ভিড় করা সুন্দরবনের মানুষের মাঝে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা প্রশাসনের সঙ্গে সহযােগিতা করেছেন। ঝড় নিয়ে সচেতনতার প্রচারে সাড়া দিয়ে নিরাপদ জায়গায় ছিলেন। না হলে হয়তাে আরও বিপদ হতে পারত।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত কড়া ভাষায় ট্রলার মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সতর্ক বার্তা থাকা সত্ত্বেও কেন ট্রলারগুলি নিরাপদ জায়গায় বাঁধা ছিল না। তা ছিল না বলেই ট্রলারে থাকা মৎস্যজীবীরা জলে পড়ে যায়। ১৫ জনকে উদ্ধার করা গেলেও এখনও নিখোঁজ ৮। একজন মারা গেছেন। এদিন মৃত সেই সঞ্জয় দাসের পরিবারের হাতেই সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার উপস্থিতিতে দু’লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়।
এদিকে সােমবার বিকেলে নামখানা পাতিবুনিয়ায় শেখ মুজিবর রহমান (৩৬) নামে একজনের দেহ পাওয়া গেছে। তিনি ট্রলারের নিখোঁজ মৎস্যজীবী কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সন্ধ্যায় আরও দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসােসিয়েসনের বিজন মাইতি সােমবার সন্ধ্যায় জানান, নিখোঁজ ৮ জনের মধ্যেই দু’জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। এঁরা ট্রলারেই ছিলেন। মুজিবর (৩৬) কাকদ্বীর কাশীপুরের ও অসিত ভুইয়া (৫৬) কুলটির বাসিন্দা।