বীরভূমের দেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি নিয়ে সুখবরের বার্তা নিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ তিনবছর টালবাহানার পরে কেন্দ্র এই খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে। এবং এর ফলেই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযােগ খুলে গেল। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলায় একশাে বছরের মধ্যে কয়লার কোনও অভাব হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার নবান্নে বীরভূমে বিশ্বের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, দেউচা পাঁচামি খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ বাস্তবায়িত হলে লক্ষাধিক যুবক যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে এখানে ১১.২২২ হেক্টর জমিতে মাটির নিচে প্রায় ২১০২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় বারাে হাজার কোটি টাকা।
জানা গিয়েছে, কয়লার উপর রয়েছে প্রচুর পাথর। এই সমস্ত পাথর সরাতে বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাথর সরিয়ে তবেই কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে প্রায় পাঁচ বছর লাগবে। সরকার এখনই এব্যাপারে কোনও তাড়াহুড়াে করতে চাইছে না। কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য ছয়টি রাজ্যকে দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল কেন্দ্র। কিন্ত রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে জানিয়ে দেয়, বাংলা একাই এই খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে সক্ষম হবে।
মুখ্যমন্ত্রী কয়লা খনিটির ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে জানান, খনিটি থেকে কয়লা উত্তোলনের আগে আগামী পাঁচবছর ধরে প্রস্তুতির কাজ চলবে। প্রসঙ্গত দেওচা-পাঁচামি এলাকাতে প্রায় চারশাে মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে চল্লিশ শতাংশ বাসিন্দা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। কয়লাখনির কাজ শুরু করার আগে এদের পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখভালের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছেন।
এই কমিটি সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলবে। এসমস্ত কিছু হবার পরেই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কয়লাখনির জন্য পরিবেশের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেব্যাপারে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে যােগাযােগ রাখা হবে। তাদের কাছে প্রাথমিকভাবে দুশাে কোটি টাকা জমা রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রচুর কর্মসংস্থানের দরজা খুলে যাবে বাংলায়। আর সেই সঙ্গে বাংলার অর্থনীতির চেহারাও যে বদলে যাবে সেটা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। কয়লাখনি এলাকার বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের বিষয়েও গুরুত্ব আরােপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, যে সমস্ত পরিবার এখানে বসবাস করছেন তাদের ভয় পাবার কোনও কারণ নেই। রাজ্য সরকার সকলের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেবে। এলাকার মানুষদের বাদ দিয়ে কিছু হবে না জানিয়ে তিনি এও বলেন, আমি নিজে কথা বলব ওদের সঙ্গে। আর তার পরেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।