প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের প্রায় দু’সপ্তাহ পরেও এখনও বিদ্যুৎ পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি, সেকথা বুধবার কার্যত স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং এজন্য ফের একবার ক্ষোভ উগরে দিলেন সিইএসসি’র ওপর। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার জন্য কাঠগড়ায় তুললেন দুই টেলিকম সংস্থা ভোডাফোন-এয়ারটেলকে। টাকা দিয়েও গ্রাহকরা এদের কাছ থেকে পরিষেবা না পাওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভোডাফোন, এয়ারটেল গ্রাহক ফোন করে অভিযোগ জানাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ টাকা দিয়েও পরিষেবা পাচ্ছেন না। তিনি এই দুই টেলিকম সংস্থাকে প্রায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ব্যবসা করতে হলে ব্যবসার মতো করে করুন। দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করুন। আর কতদিন সময় লাগবে।
সেইসঙ্গে শহরের সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা যে এখনও স্বাভাবিক হয়নি সেজন্য সিইএসসি’র কাজেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন বহু জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা না থাকায় ব্র্যান্ড পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমস্যা মেটাতে সিইএসসি’কে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গড়তেও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের কাজে মোটামুটি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা। যদিও সর্বত্র যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তিনি জানান, রাজ্যে সাড়ে চার লক্ষ বিদ্যুতের পোস্ট ভেঙেছে। জল জমে থাকায় এখনও সব পোস্টের কাজ করা সম্ভব হয়নি। নন্দীগ্রাম, মিনাখাঁ, হাড়োয়া, সন্দেশখালি, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জের একাংশে এখনও পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা কাজ করছেন। খুব শিগগির অবস্থার উন্নতি হবে। এছাড়া টিউবওয়েল এবং নদীবাঁধ মেরামতিরও কাজ চলছে। পাশাপাশি আম্ফানের ত্রাণ নিয়ে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর আগে রেশনে বিলিবন্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্য গরম করেছিল বিরোধীরা। আম্ফান বিধ্বস্তরাও ঠিকমতো ত্রাণ পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে আম্ফানের ত্রাণ থেকে কেউ বঞ্চিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মমতা।
বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে আম্ফান বিধ্বস্ত মৎস্যজীবীদের আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ছোট নৌকো ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১০ হাজার টাকা করে এবং ছিড়ে যাওয়া জাল মেরামতির জন্য ২৬০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন মমতা।
গত ২০ মে বাংলার ওপর থাবা বসিয়েছিল আম্ফান। সেই দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি প্রাথমিকভাবে দেখতে আসার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা। মোদি এসে এক হাজার কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় দল এসে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করবে। সেই কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
এদিকে আম্ফানের দাপটে বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটির পাশাপাশি গাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আম্ফানের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, পরিবেশ দিবস, ৫ জুন থেকে সুন্দরবনে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে। এছাড়া কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের তরফেও গাছ বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।