• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বিশেষ আর্থিক প্রকল্প ‘প্রচেষ্টা’র ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

রোজগারহীন অসংগঠিত ক্ষেত্রে দিনমজুরদের জন্য মাসিক এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার জন্য 'প্রচেষ্টা' নামে নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন মমতা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

দেশ জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই একটা করে শতকের ঘর বাড়িয়ে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যু ঘটল একজনের। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় লকডাউনের সময় এবং ব্যাপ্তি দুইই বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতা দেখে গোটা রাজ্যেই ৩১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউনের নোটিশ জারি করা হল। এদিন বিকেল পাঁচটা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হল। সেইসঙ্গে করোনার জেরে গৃহবন্দি দিনমজুরদের এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা জানান মমতা । 

মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অংকের হিসেবে দেখা গিয়েছে গোটা বিশ্বে প্রথম ৬৭দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ, পরের ১১ দিনে আক্রান্ত হয়েছে এক লক্ষ, পরবর্তী এক লক্ষ বেড়েছে মাত্র ৪ দিনে। সামাজিক সংক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছনোর আগে করোনা সংক্রমণ রোখার কার্যকরী ব্যবস্থা লকডাউন। সেই কারণেই গোটা রাজ্যকেই লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হল ৩১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত। 

আগামী আটদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশকীয় পরিষেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকছে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র। প্রথমে অবশ্য কলকাতাসহ রাজ্যের তেইশটি পুর শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু দুর্যোগ এলে তার মুখোমুখি হয়ে লড়াই করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন ফের অনুরোধ করেন খুব প্রয়োজন না পড়লে কেউ রাস্তায় বেরোবেন না। একটু দুর্ভোগ সহ্য করতে হলেও বাড়িতেই থাকার চেষ্টা করুন। জরুরি কাজে বাইরে বেরোতে হলে দূরত্ব বজায় রাখুন। কেউ যাতে পরস্পরের কাছাকাছি না দাঁড়ান, সেকথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, অনেকেই বেশি করে বাজার করে ফেলছেন আতঙ্কিত হয়ে। ফলে বাজারে দীর্ঘ লাইন পড়ছে। এটা কিন্তু করোনা সংক্রমণের জন্য ক্ষতিকারক। লাইন দিতে হলে যাতে একজনের নিঃশ্বাস অন্যজনের শরীরে এসে না পড়ে সেদিকে নজর দিন। ব্যাঙ্কেও একসঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াবেন না। সংবাদমাধ্যমের কাগজ যাতে রাস্তায় ফেলে ডিস্ট্রিবিউশন না করা হয়, সেদিকে নজর দিতে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংবাদপত্রের অফিসের গাড়ি থেকে যাতে হকাররা সংবাদপত্র সংগ্রহ করতে পারেন তার বন্দোবস্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিদেশ থেকে কেউ ফিরলে সম্পূর্ণভাবে গৃহবন্দি থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী পরিবারের অন্যদের সঙ্গেও যাতে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংযোগ না ঘটে সে বিষয়েও সচেতন থাকতে বলেছেন। 

সর্বদলীয় বৈঠকে বিজেপির তরফে সায়ন্তন বসু উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ভিনরাজ্যে বা বিদেশে কাজ করেন যে শ্রমিকরা, করোনা সঙ্কটের মধ্যে নিজেদের গ্রামে ফিরছেন তারা। তাদের অনেকেই অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না। ওই শ্রমিকদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন সায়ন্তনবাবু। বিজেপি নেতার অনুরোধ পাওয়ার পরপরই জেলাশাসক ও স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে। এরপর গোটা রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর সেই নজরদারি আরও সহজ হল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। 

তবে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যবাসীর জীবন নিয়েই শুধু চিন্তিত নন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্যের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জীবিকার জন্য ভাবনা রয়েছে তাঁর। এই কারণে রোজগারহীন অসংগঠিত ক্ষেত্রে দিনমজুরদের জন্য মাসিক এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার জন্য ‘প্রচেষ্টা’ নামে নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন মমতা । আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। 

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ না থাকলেও করোনা আবহে রাজ্যের এই ‘প্রচেষ্টা’ দিনমজুরদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই। এর আগেই রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল আগামী ছয় মাস পর্যন্ত রাজ্যের ৮ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। এছাড়া মিড ডে মিল স্কুল পড়ুয়াদের ঘরে পৌছে দেওয়ার জন্যও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এছাড়া করোনা নিয়ে রাজ্য সকারের বিশেষ ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। সেখানেও আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী।