বন্যায় মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর; দলের বিধায়ক, সাংসদদের জন্য বেঁধে দিলেন কাজ

মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে বোলপুরে পৌঁছে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে জেলা প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  এই বৈঠকে তিনি রাজ্য সহ বীরভূম জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। ফের এই বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বলে উল্লেখ করে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-কে দায়ী করেন তিনি।

বন্যা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য খাতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও টাকা না দিলেও রাজ্য সরকার দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে বন্যাত্রাণের কাজ চালিয়ে যাবে বলে এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০০৯ সালের পরে ডিভিসি এত জল ছাড়েনি। রাজ্য সরকারকে আগে থেকে না জানিয়ে ডিভিসি এই কাজ করায়। রাজ্যের যে দু’জন আধিকারিক ডিভিসির কমিটিতে ছিলেন, রাজ্য তাঁদের সরিয়ে নিয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত রাজ্যে ২৮ জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে এদিন ঘোষণা করেন মমতা। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলিও পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও, যাদের ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে, তাঁদের শস্যবিমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি এদিন বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই দলের বিধায়ক ও সাংসদদের কাজ বেঁধে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলি মেরামতের জন্য এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে টাকা খরচ করতে সাংসদদের নির্দেশ দেন মমতা। পাশাপাশি বিধায়কদের তহবিলের টাকা দিয়ে গ্রামীণ রাস্তাগুলি আরও উন্নত করার নির্দেশ দেন তিনি। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ রাস্তার জন্য চার কোটি টাকা খরচ করার কথা বলেছি।’  সেই সঙ্গে তিনি সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘জীবন মূল্যবান। তাই সাবধানে বন্যাত্রাণের কাজ করতে হবে।’ প্রত্যেক মানুষকেই জীবনের মূল্য সম্পর্কে অবগত করে সচেতন ও সতর্ক থাকার কথা বলেন তিনি।


মঙ্গলবার প্রশাসনিক বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি। আগামী দু’দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেদিকটা নজরে রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় যে বাড়িগুলি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে তা ১১ লক্ষ বাড়ির তালিকায় আছে কি না তা দেখতে হবে। না থাকলে তা সমীক্ষা করে যোগ করতে হবে। যেখান থেকে হোক টাকা জোগাড় করে সেই বাড়িগুলি করব।’ এছাড়াও এদিন ট্রেন লাইচ্যুত হওয়ার ঘটনায়ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এটি একটি ‘ম্যান মেড বন্যা’, এবং ২০০৯ সালের পর থেকে এত বেশি জল আগে কখনও ছাড়া হয়নি। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য দাবি করেছে, রাজ্যকে জানিয়েই ডিভিসি জল ছেড়েছে, কিন্তু মমতা এই বিষয়ে সহমত নন। তাঁর বক্তব্য, কোনও সতর্কতা ছাড়াই ডিভিসি একতরফাভাবে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।