জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সরকারের প্রশংসা করলেন ছত্রধর মাহাত

ছত্রধর মাহাত (Photo: IANS)

২০০৮ সালে নভেম্বর মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শাসবনিতে জিন্দাল গােষ্ঠীর এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস সেরে ফিরে যাওয়ার সময় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে শালবনি থানার ভাতুতুলা ও কেরানিটির মাঝে কলাই চন্ডী খালের উপর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্পমন্ত্রী রামবিলাস পাসােয়ান ও তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-এর কনভয় লক্ষ করে মাওবাদীরা ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণ ঘটনায়।

ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযােগে লালগড় থানার ছােট পেলিয়া গ্রামে গিয়ে পুলিশ তান্ডব চালায়। পুলিশের হামলায় ছিতামনি মুর্মু নামে এক মহিলার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে লালগড়। ২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর পুলিশী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লালগড় থানার দলিল পুরচকে ছত্রধর মাহাতর নেতৃত্বে গঠিত হয় পুলিশী সন্ত্রাস বিরােধী জনসধারণের কমিটি। পুলিশী সন্ত্রাস বিরােধী জনসাধারণ কমিটির আন্দোলন শুধু লালগড়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিনপুর, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, জামবনি, সাঁকরাইল, বেলিয়াবেড়া, শালবনি, গােয়ালতােড়, কোতােয়ালি থানা সহ বিভিন্ন জনসাধারণের হাতে।

২০০৯ সালের ১৮ জুন লালগড়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে। তাতেও ছত্রধর মাহাতর নেতৃত্বে জঙ্গলমহলের আন্দোলন ঠেকানাে যায়নি। ২০০১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪ বছরের বাম সরকারকে হটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিছিয়ে পড়া জঙ্গল মহলের উন্নয়নের কাজ শুরু করে। যার ফলে মাওবাদীরা পিছু হটে। জঙ্গলমহলে শান্তির প্রতিষ্ঠা হয়।


২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্ট শালবনিতে মুখ্যমন্ত্রী কনভয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ছত্রধর মাহাতর সাজার মেয়াদ কমিয়ে দেয়। যার ফলে ইউপিএ আইনের ধৃত ছদ্রধর মাহাত রাজ্যের সমস্ত মামলায় জামিন পায়। ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা আদালতে একটি মামলায় শুক্রবার জামিন পায় ছত্রধর মাহাত। যার ফলে জেল থেকে ছাড়া পেতে আর কোনও অসুবিধা হয়নি ছত্রধর মাহাতর।

শনিবার ছত্রধর মাহাতর আইনজীবী কৌশিক সিনহা ঘাটশিলা আদালত থেকে ছত্রধর মাহাতর জামিনের কাগজ নিয়ে যায়। যার ফলে দীর্ঘ ১০ বছর চার মাস পর লালগড় আন্দোলনের নেতা ছত্রধর মাহাত জেল থেকে ছাড়া পায়। শনিবার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর স্ত্রী নিয়তি মাহাত ও আইনজীবী কোশিক সিনহাকে পাশে বসিয়ে ছত্রধর মাহাত বলেন, আমি অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম জঙ্গলমহলের অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটানাের জন্য জঙ্গলমহলের মানুষ আমার পাশে ছিলেন কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নকে আমি শেষ পর্যন্ত পূরণ করতে পারিনি। কারাগারে চার দেওয়ালের মধ্যে থাকলেও আমি খবর নিয়েছি বর্তমান রাজ্য সরকার। জঙ্গলমলের উন্নয়নের কাজ করেছে। লালগড়কে নতুন রূপে সাজিয়েছে। যদিও আমি নিজের চোখে দেখিনি এখনও। আমি বাড়ি ফিরে সবকিছু দেখতে পারবাে। তাই ছত্রধর মাহাত জঙ্গলমহলে উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য বর্তমান রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে ছত্রধর মাহাত বলেন বাড়িতে গিয়ে কয়েকটা দিন পরিবারের সকলের সঙ্গে কাটাবাে। তারপর জনগণের উন্নয়নের জন্য জনগনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করবো। আশা করি জঙ্গলমহলের জনগন আমাকে দূরে ঠেলে ফেলে দেবে না আমাকে তারা গ্রহণ করবে।

তৃণমূল কংগ্রেসের বিনপুর এক ব্লকের সভাপতি শ্যামল মাহাত লালগড় আন্দোলনের সময় ছত্রধর মাহাতর ছায়াসঙ্গী ছিলেন। ছত্রধর মাহাত জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার খুশি শ্যামল মাহাত। তিনি বলেন লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে ছত্রধর দাদা তাঁর বাড়িতে ফিরে এলে আমরা তাঁর বাড়িতে যাবে তাঁকে আমরা আমাদের পাশে থাকার আবেদন জানাবাে আশাকরী তিনি আমাদের আবেদনে সাড়া দেবেন এবং আমাদের পাশে থাকবেন। ছত্রধর মাহাত জেল থেকে মুক্তি পাওয়ায় খুশি তাঁর স্ত্রী নিয়তি মাহাত, তাঁর দুই ছেলে সহ তাঁর পরিবার সকলে ও আত্মীয় স্বজনেরা।