জেলা বীরভূমে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী রাজনীতির সমীকরণে কি ভিন্নতর কোনও সুরের আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে? জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জেলবন্দি থাকার সময় জেলায় দল পরিচালনার জন্য গঠিত হয় কোর কমিটি। তিনি বোলপুরের বাড়িতে ফেরার পরে তাঁর সঙ্গে বোলপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং সিউড়ির বিধায়ক তথা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী দেখা করতে গেলে, অনুব্রত মণ্ডল তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। অথচ ওই দিনই কোর কমিটির অপর সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী বোলপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুদীপ্ত ঘোষের সঙ্গে বাড়িতে দেখা করেছিলেন অনুব্রত। এ নিয়ে সেই সময় চন্দ্রনাথ সিংহ ও বিকাশ রায়চৌধুরী কোনও বিতর্ক তৈরি না করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, অনুব্রতের সঙ্গে পরে কথা হবে।
অনুব্রত অনুগামীরা বলতে শুরু করেন, অনুব্রত মণ্ডল জেলায় ফিরে আসার পরে কোর কমিটির আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে জেলায় বিগত নির্বাচনগুলিতে কোর কমিটি সাফল্য পেয়েছে। তাই জেলায় কোর কমিটিকে রেখেই দলীয় কাজকর্ম হবে। তারপরই ১৬ নভেম্বর বিকালে বোলপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে জেলা কোর কমিটির বৈঠক বসে জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর আহ্বানে। ওই বৈঠকের আগেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকাশ রায়চৌধুরীকে মোবাইল ফোনে অনুব্রত মণ্ডলকে জেলা কোর কমিটির অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়ে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনুব্রতকে কোর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয় কোর কমিটির সকল সদস্যের উপস্থিতিতে। কোর কমিটির এদিনের বৈঠক চলাকালীন সময়েই মাঝখানে চন্দ্রনাথ সিংহ ‘অন্যত্র কর্মসূচি আছে’ বলে চলে যান। তখন থেকেই একটা রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয় বলে মনে করা হয়। যার সূচনাটা হয়েছিল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও বিকাশ রায়চৌধুরী তাঁর বাড়িতে যাওয়া সত্ত্বেও অনুব্রত মণ্ডল তাঁদের সঙ্গে দেখা না করায়। দলের বীরভূম কেন্দ্রের সাংসদ শতাদী রায়ও অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেল থেকে জামিনে আসার পরে তাঁর মুখোমুখি হননি। এমন কী তিনি জানিয়েও দিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় দল চলে। অনুব্রতের সঙ্গে যে দেখা করতেই হবে, এমনটা নয়।
দলীয় রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর শ্রীনিকেতন বাজারের রূপপুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভাড়া বাড়ির একটি পুরনো দলীয় কার্যালয়ের দখলকে কেন্দ্র করে চন্দ্রনাথ সিংহ ও অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব নজিরবিহীনভাবে প্রকাশ্যে এলো বলে মনে করা হচ্ছে। ওই দলীয় কার্যালয়টি চন্দ্রনাথ সিংহ ব্যবহার করতেন। বাড়ির মালিকের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময় জানিয়েছিলেন যে, কারও জায়গায় দলীয় কার্যালয় রাখা যাবে না। তারপরই তৃণমূল কংগ্রেস আর তাঁদের ঘরটি ভাড়া নেননি। তাঁরা ওই ঘরটি নিজেদের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছেন। কিন্তু এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু লোকজন ‘অনুব্রত মণ্ডল জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে ওই ঘরটির তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা লাগিয়ে দেয়। তাঁরা নিজেদের অনুব্রত মণ্ডলের লোক বলে দাবি করেন। অনুব্রতের নামে স্লোগান দেওয়া লোকজন বলেন, দলীয় কার্যালয়ের সামনে পাকা ড্রেন তৈরির কাজ চলায় তাঁরা এই দলীয় কার্যালয়ে আসতেন না। এবার আসবেন এবং এখানে বসবেন। এ নিয়ে চন্দ্রনাথ সিংহের অনুগামীদের সঙ্গে অনুব্রতের অনুগামীদের বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে সুরুল পুলিশ ফাঁড়ি ও শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে অনুব্রত মণ্ডল ও চন্দ্রনাথ সিংহ অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি।