সিবিআইয়ের অপদার্থতা ফের প্রমাণিত

আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। ফাইল চিত্র

প্রবীর ঘোষাল

আরজি কর কাণ্ডে ফের প্রমাণিত হল, সিবিআই এখন ঢোঁড়া সাপ। কেন্দ্রীয় এজেন্সি হিসাবে তাদের বড় লম্ফঝম্ফ সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কাজে। দেশে বিজেপিবিরোধী শক্তিকে হেনস্থা করতে তারা যত দড়, ঠিক ততটাই ব্যর্থ আরজি কর কাণ্ডের মতো নৃশংসা ঘটনার প্রকৃত তদন্তের ক্ষেত্রে। রাজ্য পুলিশ সর্বোচ্চ ৬২ দিনের মাথায় তদন্ত শেষ করেছে, এমন মামলায় আদালতে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে অভিযুক্তকে। অথচ আরজি কর কাণ্ডে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মূল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিস। সিবিআইয়ের হাতে তাকে তুলেও দিয়েছে। কিন্তু ১৬৪ দিনে তাদের তদন্তের ভিত্তিতে আদালত অভিযুক্তকে ফাঁসির আদেশ দিতে পারেনি। রাজ্যবাসীর দাবি ছিল সেটাই।

বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের গ্রেপ্তার এবং হেনস্থা করতে সিবিআই সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির তৎপরতা মানুষ দেখছে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করতে কেমন বেপরোয়াভাবে ব্যববার করছে, এইসব এজেন্সিগুলিকে, তা আর গোপন নেই। অনেকেই মনে করছে, বিজেপির খিদমত খাটতে খাটতেই সিবিআইয়ের মতো এজেন্সিগুলিকে কার্যত ঢোঁড়া সাপে পরিণত করেছে কেন্দ্রের শাসক দল।


আরজি কর কাণ্ড নিয়ে আদালতের রায়ে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছে এ রাজ্যের বিজেপি দলও। কারণ, তারা বার বার দাবি করেছিল, রাজ্য পুলিশ নয়, একমাত্র কেন্দ্রীয় এজেন্সিই পারবে প্রকৃত দোষীর সর্বোচ্চ সাজার ব্যবস্থা করতে। তাদের সুরে সুর মিলিয়েছিল সিপিএম এবং কংগ্রেসও। এখন তাদেরও সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের রায় শুনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তিনি ঘোষণা করেছেন, এই মামলায় অভিযুক্তের ফাঁসির আর্জি নিয়ে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে যাবে। রাজ্য পুলিশ সম্প্রতি দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে চার-চারটি কেসে অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশের ব্যবস্থা করেছে। তার মধ্যে হুগলির গুড়াপে এক নাবালিকার ওপর পাশবিক অত্যাচার এবং খুনের ঘটনার তারা তদন্ত শেষ করেছিল মাত্র ৫৫ দিনে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি, মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা এবং শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার অন্য তিনটি পৃথক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় ৬২ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রাজ্য পুলিশ রিপোর্ট জমা দেয় আদালতে। তার ভিত্তিতে এই মামলাগুলিতেও আদালত অভিযুক্তদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে।

সুতরাং রাজ্য পুলিশ যে মা-মাটি মানুষের জমানায় অনেক বেশি সক্রিয়, তা বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণিত। বাম আমলে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের সাত খুন মাফ ছিল। এখন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নজরদারিতে পুলিশ প্রশাসন দলীয় পতাকার রং না দেখে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে। তদন্তে রাজনীতির প্রভাব খাটে না। তাই এ রাজ্যে পুলিশ ঢোঁড়া সাপ হয়ে যায়নি। আরজি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের ব্যর্থতা প্রমাণ করে দিল, তারা নিজেদের সত্ত্বা হারিয়ে দলদাসে পরিণত হয়েছে।