রবিবার দুপুরে শিয়ালদহ আদালতে পেশ করা হয় আরজিকর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। বিচারক ধৃতদের ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আরজিকর হাসপাতালে নারকীয় ঘটনায় তথ্য প্রমাণ লোপাট সহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। গত শনিবার সন্দীপের পাশাপাশি টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সিবিআই সূত্রে প্রকাশ, সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২৩৮ নম্বর ধারা, ১৯৯ নম্বর ধারা এবং ৬১ (২) ধারায় প্রমাণ লোপাট, অপরাধীকে রক্ষা করতে ভুল তথ্য দেওয়া, সরকারি কর্মী হয়ে আইন না মানা এবং ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিন শিয়ালদহ আদালতে শুনানিতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার দিন অর্থাৎ, গত ৯ আগস্ট সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে কথা হয়েছিল টালা থানার ওসি অভিজিত মণ্ডলের। ঘটনার পর থেকে দুই ধৃতই নিয়মিত যোগাযোগে ছিল। দু’জনের কল রেকর্ডিং পরীক্ষা করে এই ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয় এজলাসে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আইনজীবীর সওয়ালে জানান, ‘এই ঘটনার নেপথ্যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে’।
গোটা বিষয়টি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই। আরজি কর হাসপাতালে নারকীয় ঘটনার তথ্যপ্রমাণ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন সন্দীপ ঘোষ ও ওসি অভিজিত মণ্ডল। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই ধৃতকে তিনদিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে সিবিআই। কারণ দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করবে সিবিআই। পুলিশ অফিসার অভিজিত মণ্ডলের কর্তব্যে গাফিলতি ও ষড়য়ন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে। রবিবার শিয়ালদহ আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘অনেকে বলছেন পুলিশ এবং সিবিআইয়ের মধ্যে টানাটানি আছে। কিন্তু এ রকম নয়। আমরা সত্যিটা জানতে চাইছি’।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী কী ধারা দেওয়া হয়েছে? তা জানতে চান বিচারক। সিবিআই তা আদালতে জানায়। তারপরই বিচারক ওই ধারাগুলোর মধ্যে থেকে একটি ধারা উল্লেখ করে বলেন, -‘আমি যত দূর জানি এটা জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার প্রমাণ লোপাটের জন্য ২৩৮, ৬১ (বি) ও আইন অমান্যের জন্য ১৯৯ ধারায় মামলা রুজু করেছে সিবিআই। এদিন শিয়ালদহ আদালতের বাইরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এর আগে দু’বার সন্দীপকে হাজির করানোর সময় আদালত চত্বরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই আগেভাগে পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় জুতো দেখতে হয় ধৃত টালা থানার ওসিকে। এদিন শিয়ালদহ আদালত থেকে বের করে সন্দীপদের সিবিআই দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হল। আদালতের বাইরে ভিড় করেছিলেন সাধারণ মানুষ। সন্দীপদের দেখা মাত্রই ভিড় থেকে ‘চোর চোর’ স্লোগান ওঠে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে শিয়ালদহ আদালতে।