এবার নিয়োগ কাণ্ডে সুপারিশকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের আর্জি জানাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, এইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তদন্তে জানা গিয়েছে, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের মধ্যে তালিকা বিনিময় হয়েছিল। পার্থ ও মানিকের মধ্যে ৩২১ জনের প্রার্থী তালিকা বিনিময় হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে। এই তথ্য বিকাশ ভবনের অয়্যারহাউস থেকে পাওয়া গিয়েছে। সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, সেই তালিকায় অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে সেই সব প্রার্থীদের জেরা করা শুরু হয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থাটি জানিয়েছে ওই তালিকায় থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন রয়েছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, নথি খতিয়ে দেখেই তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান দিব্যেন্দু, ভারতী, মমতাবালা এবং শওকতেরা অনেক চাকরিপ্রার্থীর নামই সুপারিশ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। সেই সব চাকরিপ্রার্থীরও নাম রয়েছে সিবিআই-এর নথিতে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চাকরি পেয়েছেন।
এদিকে পার্থের জামিনের বিরোধিতা করে বুধবার আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা পার্থ। তাঁর নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে গোটা নিয়োগ কাণ্ডে দুর্নীতি হয়েছে। এব্যাপারে পার্থের তৎকালীন ওএসডি গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। সেজন্য সিবিআই-এর আশঙ্কা, পার্থকে জামিন দিলে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে। আবার পার্থের জামিনের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেছেন তাঁর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল মোট ২ বছর ৮ মাস ধরে জেলে রয়েছেন। প্রথমে ইডি এবং পরে সিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্তকারীরা তাঁর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেননি বলে বিপ্লব গোস্বামী দাবি করেন। এমনকি সিবিআই জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনও করেনি।
প্রসঙ্গত নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর চার্জশিটে অভিযুক্তের সংখ্যা ১১ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন। কিন্তু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনও জেলে বন্দি রয়েছেন। তাঁর এখন বয়স হয়েছে ৭৩ বছর। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে পার্থকে জামিন দেওয়া উচিত বলে বুধবার আদালতে দাবি করেছেন বিপ্লব বাবু। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই মামলায় বাকি অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হলেও, তাঁর মক্কেলকে কেন জামিন দেওয়া হচ্ছে না?
উল্লেখ্য, গত বছর জুন মাসে বিকাশ ভবনে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেন সিবিআই-এর গোয়েন্দা আধিকারিকরা। তার মধ্যে একটি নথিতে রোল নম্বর সহ ৩২১ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম পাওয়া যায়। সেই নথিতে বেশ কিছু প্রভাবশালীর নাম উল্লেখ রয়েছে। সেই তালিকায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই ও প্রাক্তন সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী, বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ, তৃণমূলের সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর ও তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। সেজন্য তদন্তকারীদের অনুমান, এই নামগুলি বিভিন্ন ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিরাই মন্ত্রীদের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই ওই তালিকায় থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।