নারদ কাণ্ডে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া বরখাস্ত আইপিএস এসএমএইচ মির্জার সঙ্গে মুখােমুখি বসিয়ে জেরা করবার জন্য শুক্রবার নিজাম প্যালেসে বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে তলব করেছিল সিবিআই। কিন্তু হাজিরার পরিবর্তে একটি চিঠি পাঠিয়ে মুকুল রায় জানান, বর্তমানে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। এবং তার কিছুদিন সময় প্রয়ােজন। তবে সে কারণ মানতে নারাজ সিবিআই আধিকারিকরা।
সূত্র মারফত জানা যায়, সিবিআইয়ের তরফে জানানাে হয়েছে, তাঁরা মুকুল রায়কে সময় দিতে পারবেন না। পরিবর্তে শনিবার তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মুকুল রায়ের প্রতিনিধিকে নােটিশও পাঠানাে হয়েছে। বলে সিবিআইয়ের তরফে জানানাে হয়।
প্রসঙ্গত, নারদ কাণ্ডের স্টিং অপারেশনের ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় গত বৃহস্পতিবার বরখাস্ত আইপিএস সৈয়দ মহম্মদ হােসেন মির্জা ওরফে এসএমএইচ মির্জাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ব্যাঙ্ক শাল কোর্টে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারক তাকে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে উঠে আসে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নাম।
যদিও বা মির্জা গ্রেফতারের পর নারদা কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলও জানিয়েছে, মির্জার সঙ্গে তাঁকে যােগাযােগ করিয়ে দিয়েছিল মুকুল রায়। শুধু তাই নয়, স্যামুয়েল আরও জানায়, যে মির্জার হাত ধরে তৃণমূলের বহু নেতাই টাকা লেনদেন করত এবং ধৃত এস এম মির্জা একদা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের ‘ম্যান’ হিসেবেই পরিচিত ছিল।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভােট চলাকালীন নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। সেখানে অভিযুক্ত মির্জাকে হাত পেতে কয়েক বান্ডিল টাকা নিতে দেখা যায়। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালের এপ্রিলে মামলা রুজু করে নারদ কাণ্ডের তদন্ত শুরু করে সিবিআই। অভিযােগ ওঠে, মুকুল রায়ের নির্দেশেই বর্ধমানের তৎকালীন পুলিশ সুপার মির্জা নারদ কর্তা স্যামুয়েলের কাছ থেকে টাকা নেন।
একথা জিজ্ঞাসাবাদের পর মির্জা ও স্যামুয়েল দু’জনেই জানিয়েছে। কিন্তু এই অভিযােগ অস্বীকার করে মুকুল রায় জানান, তিনি স্যামুয়েলের কাছে মির্জাকে। পাঠিয়েছিলেন ঠিকই, তবে তা টাকা লেনদেনের জন্য নয়। স্যামুয়েল শিল্প করতে চেয়েছিল, সেই কারণে। সুত্র মারফত আরও জানা যায়, মির্জাকে গ্রেফতারের পর দফায় দফায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। জেরাতে মির্জা বেশ কিছু এমন তথ্য দিয়েছে, যা সকল ক্ষেত্রে মুকুল রায়ের বিপক্ষেই গেছে। কিন্তু তৎকালীন মুকুলঘনিষ্ঠ মির্জা সঠিকভাবে কী কী তথ্য দিয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ সিবিআই। তবে নারদ কাণ্ডের জট কাটাতে যে সিবিআই উঠে পড়ে লেগেছে, তা মুকুল রায়ের চিঠির পরিবর্তে সিবিআইয়ের পাঠানাে নােটিশেই স্পষ্ট।