• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

ঘরের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী  ও শিশুপুত্রকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি

বগটুই গণহত্যার ছায়া এবার বোলপুরে খায়রুল  আনাম:  আবারও ঘরের মধ্যে আগুন ধরিয়ে তিনজনকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনা ঘটল বীরভূমে।  আর এই ঘটনার জেরে বীরভূমেরই রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে একটি ঘরে আশ্রয় নেওয়া পুরুষ-মহিলা ও শিশু-সহ ১০ জনকে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে পেট্রোল ঢেলে  জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার স্মৃতি উসকে দিয়েছে।  ২০২২ সালের ২১ মার্চ

বগটুই গণহত্যার ছায়া এবার বোলপুরে

খায়রুল  আনাম:  আবারও ঘরের মধ্যে আগুন ধরিয়ে তিনজনকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনা ঘটল বীরভূমে।  আর এই ঘটনার জেরে বীরভূমেরই রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে একটি ঘরে আশ্রয় নেওয়া পুরুষ-মহিলা ও শিশু-সহ ১০ জনকে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে পেট্রোল ঢেলে  জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার স্মৃতি উসকে দিয়েছে।  ২০২২ সালের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন উপ-প্রধান বগটুই গ্রামের শেখ ভাদুকে বোমা মেরে ও গুলি করে খুন করা হয়। আর সেই খুনের বদলা নিতে ওই রাত্রেই শেখ ভাদুর অনুগামীরা রামপুরহাটের একটি  পেট্রোল  পাম্প থেকে ক্যান ভর্তি করে পেট্রোল টোটোয় চাপিয়ে নিয়ে গিয়ে বগটুই গ্রামে একটি ঘরে আশ্রয় নেওয়া পুরুষ-মহিলা ও শিশু-সহ ১০ জনকে বাইরে থেকে  ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় সারা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে। কলকাতা হাইকোর্ট  হাড় হিম করা সেই ঘটনার সিবিআই  তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই তদন্ত এখনও চলছে। এবার বোলপুর থানার রায়পুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন গীত গ্রামে শুক্রবার  ৫ জুলাই রাত্রে যেভাবে একটি ঘরের মধ্যে শুয়ে থাকা স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের শিশুপুত্রকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তাতে অনেকেই এই ঘটনার সাথে বগটুই গণহত্যার সাদৃশ্য  দেখতে পাওয়ায়, এই ঘটনারও সিবিআই তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন।
নতুন গীত গ্রামের পেশায় ঠিকাদার  আব্দুল আলিম ওরফে তোতা বোলপুরেই ঠিকাদারির কাজ করতেন।  তার বড় ছেলে শেখ রাজ জানায়, তাঁর পায়ে চোট লাগায় বৃহস্পতিবার  ৪ জুলাই সে বাড়িতেই ছিল। রাত্রে সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় রাত্রি ৯টা ৩০ মিনিট নাগাদ বাবা  বৃষ্টির জলে পুকুর থেকে উঠে আসা মাছ ধরতে বাড়ির বাইরে যান এবং মাছ ধরে নিয়ে রাত্রি ১১ টার সময় বাড়ি ফিরে আসার পরে মা সেই মাছ রান্না করার পরে তাঁদের ভাত খেতে রাত্রি ১২ টা ৩০ মিনিট বেজে  যায়।  তারপর তাঁরা শুতে যান। একতলা বাড়ির একটি ঘরে বাবা, মা ও ছোট ভাই শুয়ে ছিলেন । তিনি শুয়ে ছিলেন পাশের ঘরে।  রাত্রি ১ টা ২০ মিনিট নাগাদ অর্থাৎ,  তখন শুক্রবার ৫ জুলাই হঠাৎ  তিনি বাবার ঘর থেকে চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন বাবার ঘরের মধ্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে ঘরের দরজা খুলে কোনওক্রমে আগুনে ঝলসে যাওয়া শেখ  আব্দুল আলিম ওরফে তোতা (৩৮), তাঁর স্ত্রী  রূপা বিবি (৩০) ও শিশুপুত্র শেখ আয়ান (৪)-কে উদ্ধার করে কোনওক্রমে একটি গাড়ি জোগাড়  করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসকরা তিনজনকেই বর্ধমান নিয়ে যাওয়ার কথা জানালে তাঁদের বর্ধমান নিয়ে যাওয়ার পথেই   প্রথমে শেখ আয়ান ও পরে রূপা বিবি মারা যান। শেখ আব্দুল আলিমকে নিয়ে গিয়ে বর্ধমানের  ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে  বাম চাঁদাইপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হলে সেখানে তাঁর চিকিৎসা  শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনিও মারা যান।
ভয়াবহ এই ঘটনার খবর পেয়ে রাত্রেই নতুন গীতগ্রামে যায় বোলপুর থানার পুলিশ। রাত্রেই ঘটনার তদন্তের কাজে হাত লাগায় পুলিশ। শুক্রবার  ৫ জুলাই সকাল থেকেই গ্রামে একে একে গিয়ে পৌঁছন পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশ তদন্তে নেমে শেখ আব্দুল আলিমের  পরিবারকে যে ঘরের জানালা দিয়ে আগুন  ধরিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে,  সেখানকার জানালার কিছুটা দূরে একটি লাঠির ডগায় পোড়া কাপড় বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। যাতে কেরোসিন তেলের গন্ধ থাকায় মনে করা হচ্ছে যে, এই লাঠির ডগায় বাঁধা কাপড়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে ঘরের  খোলা জানালার মধ্যে  কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা সেটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে।  তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ ওই বাড়িটি সিল করে দিয়ে গোটা এলাকা দড়ি দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। মৃত রূপা বিবির বাবা শেখ করিম জানান, এটি পরিকল্পিত খুন। কিন্তু কেন এভাবে খুন করা হল,  তা খতিয়ে দেখতে এবং অপরাধীদের খুঁজে  বের করতে তিনি ঘটনার সিবিআই  তদন্তের দাবি জানান। ওই গ্রামের চামেলি  বিবি বলেন, গ্রামে যে ঘটনা ঘটল তাতে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। তিনিও ঘটনার সিবিআই  তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।