শুক্রবার নগর ও দায়রা আদালতে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। দাখিল চার্জশিটে প্রথমেই নাম রয়েছে ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। এছাড়া অরুণ হাজরা ও তৃণমূলের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উল্লেখ রয়েছে এই চার্জশিটে। এদিন কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। জানা গিয়েছে, নতুন এই চার্জশিটে ২০১ ধারা যোগ করেছে সিবিআই। মূলত তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগেই যোগ করা হয়েছে এই ধারা। পাশাপাশি, প্রতারণা, জালিয়াতি, দুর্নীতি দমন আইন ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারাও যোগ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১১ জন সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে সিবিআই-এর তরফে।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে। ওই মামলায় ইডির হাতে প্রথম গ্রেফতারি। এরপর একই মামলায় তাঁকে সিবিআইও গ্রেফতার করে। দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন কালীঘাটের কাকু। তাঁর কণ্ঠম্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল সিবিআই। শারীরিক অসুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালেও ছিলেন তিনি। অবশেষে সিবিআই সুজয় কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে। এবার সেই সব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই চার্জশিট জমা দিল সিবিআই। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিন পান কালীঘাটের কাকু। তবে তিনি বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। সিবিআই-ও সর্বদা নজর রাখছে তাঁর গতিবিধির উপরে। এই মামলায় কালীঘাটের কাকু ও শান্তনুর নাম বারবার উঠে এলেও অরুণের নাম প্রথমবার সামনে এসেছে।
জানা গিয়েছে, উত্তর কলকাতার বিজেপি নেতা বলে পরিচিত অরুণ। আগে জাতীয় কংগ্রেস করলেও, কিছুদিন তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর তাপস রায়ের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন। এখন তিনি স্থানীয় বিজেপি নেতা বলেই পরিচিত। এর ফলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরাসরি কোনও বিজেপি নেতার নাম জড়াল। এদিকে কালীঘাটের কাকুকে এই মামলায় প্রথমে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তারপর জেলে থাকাকালীন একই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। আদালতে তদন্তকারী সংস্থা জানায় তারা কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চায়। তবে সুজয়কৃষ্ণের শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় প্রক্রিয়া বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়। দীর্ঘ টানাপোড়নের পর সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা নেয় তারা।
তারপরই ইডির মামলায় আগেই জামিন পাওয়া সুজয়কৃষ্ণ শর্তসাপেক্ষে সিবিআইয়ের মামলাতেও অন্তর্বতী জামিন পান। যদিও বর্তমানে অন্তবর্তী জামিনে থাকলেও তিনি স্বস্তি পেলেন না। চার্জশিটে তাঁর নাম থাকায় কালীঘাটের কাকু যে তদন্তকারীদের নজরে রয়েছেন তা বোঝাই যাচ্ছে। বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনুর বিরুদ্ধেও চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। এই মামলায় শান্তনুকেও প্রথমে গ্রেপ্তার করে ইডি। পরে তাঁকে হেফাজতে নেয় সিবিআই। তদন্তে নেমে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যতম অভিযুক্ত সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি অডিও পান সিবিআই আধিকারিকরা। তাঁদের কণ্ঠস্বরেরও নমুনা নেওয়া হয়। সন্তুর বিরুদ্ধে আগেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।