আরজিকর দুর্নীতির তদন্তে এফআইআর দায়ের করল সিবিআই, আতস কাঁচের তলায় সেই সন্দীপ ঘোষ

আরও বিপাকে পড়তে চলেছেন আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। এবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় এফ আই আর করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং আর জি কর হাসপাতাল উভয়ের বিরুদ্ধেই এই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সিবিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখা এই এফআইআর দায়ের করেছে। এর আগে রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল সিট এই দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছিল। শনিবার সকালে এই মামলার সমস্ত নথিপত্র নিজ়াম প্যালেসের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দুর্নীতি দমন শাখার হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্য।

এদিকে টানা ৯ দিন সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই জেরার মুখোমুখি সন্দীপ ঘোষ। ইতিমধ্যে শিয়ালদহ আদালত সিবিআই-কে তাঁর পলিগ্রাফ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। শনিবার সেই পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয় সন্দীপের।

আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি আর জি কর কলেজ ও হাসপাতালের একাধিক বেনিয়মের তত্ত্ব আদালতে তুলে ধরেন। এই দুর্নীতির অভিযোগে সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন ওঠে। হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি নিজেই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। চাঞ্চল্যকর সেই অভিযোগে মর্গ থেকে দেহ লোপাট থেকে শুরু করে ‘মেডিক্যাল ওয়েস্ট’ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি আখতার আলি আর জি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ইডি ও সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করাতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।


প্রসঙ্গত ২০২১ সাল থেকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রিন্সিপ্যাল হন সন্দীপ ঘোষ। এর আগে তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন। তিনি আর জি করের দায়িত্বে আসার পরেই একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি এই দুর্নীতি নিয়ে আগেও সরব হয়েছিলেন। এমনকি অভিযোগ যায় নবান্নতেও। কিন্তু কোনও অদৃশ্য কারণে সেই অভিযোগের তদন্ত এগোয় নি। এরই মধ্যে গত ৯ আগস্ট সকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে একজন মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর একদিকে ধর্ষক ও খুনীদের শাস্তির দাবি ওঠে।

অন্যদিকে হাসপাতালে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। এই প্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট থেকে আইপিএস অফিসার প্রণব কুমারের নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের তরফে একটি সিট গঠন করা হয়। কিন্তু আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। মামলার তিন দিনের মধ্যেই পুলিশের তদন্তে ভরসা না রেখে সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার তুলে দেয় হাইকোর্ট। একইভাবে রাজ্য সরকারের গঠিত এই সিটের ওপরও অনাস্থা প্রকাশ করে রাজ্যের উচ্চ আদালত। এই দাবিতে আর জি করের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তভার ইডিকে তুলে দেওয়ার আর্জি জানায় হাইকোর্ট। যদিও এবিষয়ে গত শুক্রবার বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, একাধিক সংস্থা তদন্ত করলে বিষয়টি আরও জটিল ও সময় সাপেক্ষ হতে পারে। সেজন্য এই তদন্তভারটিও সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানায় হাইকোর্ট।