দুর্গাপুজোর অনুদান সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের

দুর্গাপুজোয় রাজ্য সরকারের তরফে ক্লাবগুলিকে দেওয়া অনুদান সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে ভৎসর্না করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। রাজ্য সরকারের অনুদান সংক্রান্ত অর্থ নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ”পুজোয় রাজ্য সরকারের তরফে যে ৮৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়, সেই টাকাতে কার্যত পুজো কমিটির বিশেষ কোনও লাভ হয় না। ৮৫ হাজার টাকায় প্যান্ডেল বা পুজোর কোনও কাজ হওয়া সম্ভব নয়। ওই টাকা সম্ভবত ক্লাব সদস্যরা নিজেদের কাজে লাগাতে পারে।”

উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেশ কিছু বছর ধরেই দুর্গাপুজোতে রাজ্য সরকারের তরফে রেজিস্টার্ড ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়া হয়। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে সেই অনুদানের অর্থের পরিমাণ ছিল ৭০০০০ টাকা। এই বছরে সেই অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৫০০০ টাকা। যদিও আরজি কর কাণ্ডের আবহে প্রতিবাদ জানাতে অনেক ক্লাবই সেই অনুদানের অর্থ প্রত্যাখ্যান করেছে।

কার্যত দুর্গাপুজোয় রাজ্য সরকারের অনুদানের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থ মামলা করেন দুর্গাপুরের বাসিন্দা সৌরভ দত্ত। সোমবার প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানিতে দুর্গাপুজোর অনুদান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি।


সোমবার এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ”গত দুবছর ধরে পুজোর প্যান্ডেলে যেমন রমরমা দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে ৮৫ হাজার টাকাতে পুজো কমিটির তেমন কিছুই উপকার হয় না। ওই টাকা সম্ভবত ক্লাবের সদ্স্যদের জন্য কাজে লাগতে পারে।” সোমবার মামলাকারী আইনজীবীর তরফে আদালতে জানানো হয়, রাজ্য সরকারের পুজোর অনুদান খাতে মোট ২৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

সোমবার মামলার শুনানিতে মামলাকারীর পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী শামিম আহমেদ। সোমবার তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও এক মহিলা আইনজীবী। তিনি জিনঘটিত রোগ ‘মাস্কুলার ডিস্ট্রফি’ সংক্রান্ত অন্য একটি মামলা লড়ছেন। এজলাসে তাঁকে দেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি অনেক দিন ধরে ওই মামলা লড়ছেন। রাজ্য ওই মামলায় প্রতি মাসে এক হাজার টাকা দেয় বলে জানিয়েছে। রাজ্যে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য সরকার ১ হাজার টাকা দেয়। তাঁদের আরও বেশি প্রয়োজন, সরকারের বিবেচনা করলে ভাল হয়।’

তার পরই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্য দুর্গাপুজোর জন্য ৮৫ হাজার টাকা অনুদান দিতে পারলে রাজ্যের অন্যান্য অসহায় নিপীড়িত মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত খরচ নিয়ে ভাবা উচিত। এখানে পূর্ত দপ্তরের কর্মীরা পর্যাপ্ত টাকা পান না। রাজ্যের সবার কথা ভাবা উচিত।’ একই সঙ্গে রাজ্যের থেকে অনুদান সংক্রান্ত ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে রাজ্যের কাছে হলফনামা চেয়েছে হাইকোর্ট। পরবর্তী শুনানিতে রাজ্যকে সেই হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

উল্লেখ্য, অনুদান সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্ট আগেই ক্যাগ রিপোর্টের কথা বলেছিল। রাজ্য কোন খাতে কত টাকা খরচ করেছে, কোথায় কোথায় খরচ হয়েছে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করা থাকে সেই রিপোর্টে। এ বার সেই রিপোর্ট নিয়েই হলফনামা চাইল আদালত।