নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল এই রাজ্যে, তা ক্রমশ সুনামি হয়ে আছড়ে পড়েছে গােটা দেশে। এমনকী দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলিতেও সেই আন্দোলনের জোয়ার। বৃহস্পতিবার রাজাবাজার থেকে মল্লিক বাজার পর্যন্ত মিছিল ও জনসমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন সিএএ বিরােধী আন্দোলনে তিনি দেশের পড়ুয়া থেকে ভিনরাজ্যের বাসিন্দা সকলের পাশে আছেন। এমনকী গুয়াহাটি, লখনউয়ের পর কর্ণাটকেও এই আন্দোলনের শরিক হতে রাজ্যের প্রতিনিধিদের পাঠচ্ছেন। এদিন নেত্রী সিএএ বিরােধী আন্দোলনে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না’। ঘােষণা করেন, ‘জীবন দিয়ে অধিকার রক্ষার আন্দোলন চলবে’।
যাদবপুরের সমাবর্তন উৎসবে পড়ুয়াদের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলন নিয়ে যখন রাজ্যপাল সমালােচনা করছেন, ঠিক সেই সময়ই মমতা জানিয়ে দিলেন তিনি পড়ুয়াদের পাশে আছেন। শুধু এই রাজ্যেই নয় দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেও বৃহস্পতিবারের জনসমাবেশ থেকে আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, ছাত্রাবস্থা থেকে আন্দোলন করছি। আন্দোলনের গতি আমি বুঝি। প্রথম থেকেই বলে আসছি, সিএএ বিরােধী আন্দোলেনর সঙ্গে আছি। পাশে আছি ছাত্র আন্দোলনের। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আন্দোলনের ভয়ে হস্টেল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিরােধিতা করেই সেই আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু কখনও কাউকে গ্রেফতার করে আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। যা এখন বিজেপি করছে। মমতা এদিন ছাত্রদের অভিনন্দন জানান, সিএএ বিরােধী আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য।
আজ নৈহাটি যাচ্ছেন মমতা। আগামী ২৮ ডিসেম্বর ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রেই সিএএ বিরােধী আন্দোলন করার নির্দেশ দেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। ২৯ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন মমতা। সেখান থেকে ৩০ তারিখ পুরুলিয়ায় গিয়ে আন্দোলনে যােগ দেবেন নেত্রী। ৩১ তারিখ কলকাতায় ফিরে আগামী বছরের পয়লা জানুয়ারিতে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসকে নাগরিক অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এরপর ৩ জানুয়ারি শিলিগুড়িতে গিয়েও সিএএ বিরােধী আন্দোলনে যােগ দেবেন নেত্রী।
শুধু এই রাজ্যেই নয়, দেশজোড়া আন্দোলনেও শরিক হতে কিছু কর্মসূচির কথা ঘােষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিন রাজ্যের আন্দোলকারীদের পাশে থাকার বার্তা দিতে আগামী দীনেশ ত্রিবেদী ও দোলা সেনসহ কয়েকজন প্রতিনিধিকে পাঠাচ্ছেন কর্ণাটকে। সেখানে সিএএ বিরােধী আন্দোলনে গুলি চালনায় নিহতদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও গুয়াহাটি এবং লখনউতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন মমতা। যদিও তাদেরকে ওই রাজ্যগুলিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল নেত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, যদি এই রাজ্যে বিজেপি নেতারা এসে মিছিল করতে পারেন, তাহলে আমাদের রাজ্যের প্রতিনিধিরা ভিন রাজ্যে যেতে পারবেন না কেন? মমতার এই বার্তা থেকে পরিষ্কার সিএএ’র সূত্র ধরে জাতীয় আন্দোলনের দিকে পা বাড়াচ্ছেন নেত্রী।