আরজি কর কাণ্ডের পর আজই রাজ্যে প্রথম কোনও নির্বাচন হতে চলেছে। আজ মাদারিহাট, সিতাই, মেদিনীপুর, তালড্যাংরা, নৈহাটি ও হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনের জন্য এই ৬টি কেন্দ্রে মোট ১০৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। একমাত্র মাদারিহাট কেন্দ্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিল বিজেপি।
আরজি কর কাণ্ডের পর নাগরিক আন্দোলনের জেরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। এই কাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েছিল শাসকদল। আরজি কর কাণ্ডের পর প্রথম রাজ্যে কোনও নির্বাচন হতে চলেছে। তাই শাসক বিরোধী সব পক্ষই নির্বাচনে নিজেদের জল মাপতে ময়দানে নেমে পড়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে একে অপরকে আক্রমণ শানিয়েছেন শাসক ও বিরোধী দলগুলির নেতা নেত্রীরা। এই নির্বাচনের প্রচারে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা না গেলেও প্রচার পর্বের শেষ লগ্নে দলের প্রার্থীদের হয়ে ভোট চেয়েছেন মমতা।
অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে ভোটের আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে গিয়েছিলেন রাজ্যের শাসকদল। তাদের অভিযোগ, বিরোধীরা বিভিন্নভাবে চক্রান্তের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব করে তৃণমূলের উপর দোষ চাপাতে চাইছে। এরপরই কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে থাকবে রাজ্য পুলিশ। পাশাপাশি সিএপিএফের কোম্পানি কমান্ডারের নেতৃত্বে গঠিত কুইক রেসপন্স টিমে রাজ্য পুলিশের এএসআই অথবা এসআই স্তরের একজন থাকবেন।
উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে শাসকদলের পাল্লা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারী থাকে। লোকসভা ভোটের পরেই রাজ্যের ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল ছিল শাসকের পক্ষে। ৪–০ হয়েছিল ফলাফল। আজকের উপনির্বাচনেও এরকমই ফলাফল আশা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁদের দাবি, সবকটি আসনেই জয়ী হবে শাসকদল। বিজেপির হাত থেকে মাদারিহাট আসনটিও ছিনিয়ে নেবে তারা।
পাশাপাশি তৃণমূলের আরও দাবি, আরজি কর কাণ্ডের পর হওয়া প্রতিবাদ বৃহত্তর জনমানসে প্রভাব ফেলতে পারেনি। উপনির্বাচনের ফলাফল থেকে তারই প্রমাণ মিলতে চলেছে। এছাড়াও তৃণমূলের হাতে অস্ত্র হিসেবে রয়েছে উন্নয়ন ও বিভিন্ন জনহিতকর প্রকল্প। এই সব শাসকদল তৃণমূলকে সামান্য হলেও এগিয়ে রাখবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। অপরদিকে, আরজি কর কাণ্ডের পর হওয়া প্রথম ভোট নিয়ে আশাবাদী বিরোধীরা। অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, আরজি কর আন্দোলনের পিছনে বাম ও অতিবাম সংগঠনের হাত রয়েছে। এবার তাই বামফ্রন্টের ফলাফলের দিকে নজর থাকবে সবার। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেনি বামফ্রন্ট। পরিবর্তে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ও আইএসএফ–এর সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করছে বামেরা। অন্যদিকে বিজেপিও এই নির্বাচনে নিজেদের ক্ষমতা পরখ করতে মরিয়া। তাঁদের মতে, আরজি কর কাণ্ডের পর কিছুটা ব্যাকফুটে তৃণমূল। এই আবহে রাজ্যে আয়োজিত উপনির্বাচনে বিশেষ লাভ করতে পারবে না শাসকদল। বিজেপি এক নেতার দাবি, রাজ্যে তৃণমূলকে রুখতে বিজেপি ছাড়া আর কারও উপরই ভরসা নেই মানুষের। তাই এবার উপনির্বাচনে ভালো ফল করবে বিজেপি।
নৈহাটিতে এ বার লিবারেশনের প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদারকে সমর্থন করছে বামফ্রন্ট। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে সনৎ দে–কে। বিজেপির হয়ে এই কেন্দ্র থেকে লড়াই করছেন রূপক মিত্র। জুন মালিয়ার ছেড়ে যাওয়া মেদিনীপুর আসনে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন সুজয় হাজরা। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিজেপির হয়ে ময়দানে নামছেন শুভজিত রায়। এই কেন্দ্রে মণিকুন্ত খামরুইকে প্রার্থী করেছে সিপিআই। কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন শ্যামলকুমার ঘোষ। গতবারের বিধানসভা ভোটে সিতাই কেন্দ্র থেকে লড়াই করে জিতেছিলেন জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। বর্তমানে তিনি কোচবিহারের সাংসদ। এর কারণেই এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। উপনির্বাচনে জগদীশের স্ত্রী সঙ্গীতা রায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে দীপক কুমার রায়কে। মনোজ টিগ্গা সাংসদ হওয়ায় মাদারিহাট বিধানসভা আসনটি খালি হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে মাদারিহাট আসন থেকে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভূমিপুত্র রাহুল লোহারকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। অপরদিকে জয়প্রকাশ টোপ্পোকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাঁকুড়ার তালড্যাংরা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন ফাল্গুনী সিংহবাবু। সিপিএমের প্রতীকে লড়ছেন দেবকান্তি মোহান্তি। বিজেপি প্রার্থী করেছে অনন্যা রায়কে। হাড়োয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম। এই কেন্দ্রে আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম গাজিকে সমর্থন করছে বামেরা। বিজেপি প্রার্থী করেছে বিমল দাসকে।