শহরে ফের বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।এবার দক্ষিণ কলকাতা অঞ্চলের ভবানিপুর থানা এলাকায়।বহুতলের একটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দফতরে আগুন লাগার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। দমকল বিভাগ,কলকাতা পুলিশ,সিইএসসি এবং বিপর্যয় মােকাবিলা বিভাগের সহায়তায় বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয় বহুতলে আটকে পড়া মানুষদের।আগুন লেগে রীতিমতাে জতুগৃহের আকার নিলেও হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি।প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।খতিয়ে দেখা হচ্ছে আগুন লাগার কারণ।
শুক্রবার সকাল ৯টা ২০মিনিট নাগাদ মুখার্জি বিল্ডিংয়ে আগুন লাগার খবর আসে স্থানীয় থানাসহ দমকল বিভাগে।ছয়তলা একটি বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলের একটি ইন্টিরিয়ার ডেকোরেশন ‘গ্ল্যামার ফ্যাশন’র অফিসে আগুন লাগে।খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে প্রথমে পৌঁছায়।দমকল বিভাগের পাঁচটি ইঞ্জিন দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করেন দমকল বিভাগের কর্মীরা।অন্যদিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বহুতল থেকে আটকে পড়া মানুষদের বাইরে নিয়ে আসার কাজ শুরু করে দেন। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মােকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা ২০ মিনিট সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সিইএসসি বিভাগের আধিকারকিরা।আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে বেগ পেতে হয় দমকল বিভাগের কর্মীদের।মুখার্জি বিল্ডিংয়ের পার্শ্ববর্তী বহুতলের উপর থেকে দমকল বিভাগের কর্মীরা জল দিয়ে আগুন নেভানাের চেষ্টা শুরু করেন।এই অঞ্চলে একের পাশে এক বহুতল।ফলে বেশ সমস্যায় পড়েন দমকল বিভাগের কর্মীরা।ভবানিপুর থানা এলাকার ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় পার্শ্ববর্তী আবাসনগুলােও দ্রুত খালি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।দমকল কর্মী সূত্রে খবর, ইন্টিরিয়ার ডেকোরেশনের অফিসটিতে কোনও দাহ্যবস্তু থাকায় আগুন নেভাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।অফিসটিতে ফলস সিলিং এবং কাঠের আসবাব থাকায় আগুন বেড়ে ওঠে নিমেষেই।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরবর্তীকালে আরও সাতটি ইঞ্জিন নিয়ে আসা হয়।মােট ১২টি দমকল ইঞ্জিনের চেষ্টায় বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ আগুন সম্পূর্ণ রূপে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। যদিও দিনভর পকেট ফায়ার যদি কিছু থেকে থাকে তা খতিয়ে দেখেন দমকল বিভাগের আধিকারিকরা।আগুন লাগার কারণে বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে।তার জেরে বেশ কিছুটা আতঙ্ক ছড়ায়।তবে বিশাল পুলিশ বাহিনীর চেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।স্মােক ডিটেক্টর দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখেন দমকল বিভাগের আধিকারিকরা। তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় থানার পাশাপাশি ডিসি (সাউথ)মিরাজ খালিদ,দমকল বিভাগের ডিজি জগমােহন,মেয়র ফিরহাদ হাকিম পৌছান।অন্যদিকে বারাসতে কাকলি ঘােষ দস্তিদারের মনােনয়ন পত্র জমা কর্মসূচিতে থেকেই দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু জানান,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চৌরঙ্গির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রিপাের্ট চেয়েছেন।দমকল বিভাগের ডিজি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন।আগুন কিভাবে লাগলাে তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দেখা হবে।ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপাের্ট দেবেন ফরেন্সিক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল কিনা তাও দেখা হবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই আসে বাগরি মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের কথাও।সেই সূত্রে তিনি বলেন,এখানে সাত মাস আগে আগুন লেগেছিল।এখানকার ব্যবসায়ীরা মুখ্যমন্ত্রী এবং আমার কাছেও এসেছিলেন।অগ্নি নির্বাপনের যেটুকু কাজ বাকি আছে তা ছয় মাসের মধ্যে করতে বলা হয়েছে।আপাতত বিবেচনার উপর নির্ভর করে ব্যবসায়ীদের দোকান খােলার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সিইএসসির তরফ থেকে একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানাে হয়েছে,খবর পাওয়া মাত্রই ২০ মিনিটের মধ্যে চৌরঙ্গি রােডে যে বহুতলে আগুন লেগেছে সেখানে পৌছায় সিইএসসির ইঞ্জিনিয়াররা।দমকল বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনাপুর্বক ৯টা ৫৭মিনিট নাগাদ বহুতলটির বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।এর পাশপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্ত্কারী আধিকারিকরা খতিয়ে দেখেন,বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্তই ছিল।আগুন নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত দমকল বিভাগ ও পুলিশ কর্মীদের সঙ্গেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সিইএসসির আধিকারিকরা।সিইএসসির মুখপাত্র জানিয়েছেন,ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন দফতরের আধিকারিকরা।সম্পূর্ণ বিপর্যয়মুক্ত হওয়ার পর ফের ওই বহুতলের বিদ্যুৎ পরিসেবা চালু করে দেওয়া হবে।এদিকে এই ঘটনার জেরে সপ্তাহের কাজের দিনে ব্যাপক যানজটের শিকার হতে হয় নিত্যযাত্রীদের।আগুন লাগার পর চৌরঙ্গি রােড সহ গােটা অফিস পাড়া এলাকা দিয়ে যাননিয়ন্ত্রণ শুরু করেন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।বেশ কিছুটা সময় যানজটের শিকার হতে হয় অফিস যাত্রী থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়াদের।যদিও অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে কলকাতা পুলিশ সুত্রে খবর।