• facebook
  • twitter
Friday, 15 November, 2024

রক্তাক্ত জঙ্গলে শান্তি এনেছি : মমতা

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'মন্দিরের ঠাকুরটা তৈরি হবে মার্বেলের। তবে পুজোর জন্য নিম কাঠে ঠাকুর তৈরি হবে। কে পুজো করবে, কীভাবে হবে— সব ঠিক হবে। আমার সব কাজই শেষের পথে। তবে আমাকে এবং মুখ্যসচিবকে একবার যেতে হবে ট্রাস্টি বোর্ড তৈরির জন্য। কালীঘাট স্কাইওয়াক চাইলে আমি কালই উদ্বোধন করতে পারি, কিন্তু করব না। অসম্পূর্ণ কাজ আমার পছন্দ নয়।'

আদিবাসী ভবনে বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৬০ মিনিটের অধিক সময়ের বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কণ্ঠে বারংবার প্রতিধ্বনিত হল সর্বধর্ম সমন্বয়ের বাণী। কখনও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হিন্দুর রক্ত মুসলিমের গায়ে চলে যায় অথবা মুসলিমের রক্ত হিন্দুর গায়ে। আদিবাসীর রক্তে প্রাণ বাঁচে।’ কখনও আবার তিনি বলেছেন, ‘ধর্ম পৃথক হলেও, উৎসব সবার।’ বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি গর্ব অনুভব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঝাড়গ্রামে তিরন্দাজি থেকে ফুটবল একাডেমি তৈরি করেছি। দেশের যে কোনও টুর্নামেন্টে এদেরই ডাক পড়ে। ভারত আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে সোনা না পেলেও আমার আদিবাসী ভাই-বোনেরা সেই আশা পূরণ করবেই।’ এর সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘জঙ্গল ছিল রক্তাক্ত, ক্ষুধার্ত! আজ আমরা জঙ্গলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে এনেছি।’ এখানেই শেষ নয়, এদিনের অনুষ্ঠান থেকে উপজাতিদের জমি অধিকার প্রসঙ্গে বক্তব্য পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘অনেকেই উপজাতিদের জমি কেড়ে নেন, বনের অধিকার উপজাতিদেরই। বিরসা মুন্ডা এই অধিকারের কথা বলেছিলেন। উপজাতিদের জমি যেন কেউ কাড়তে না পারে, বিধানসভায় আইন করে আমরা সেই অধিকার সংরক্ষণ করেছি।’

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ কতদূর? এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানান, ‘দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সামনে চৈতন্য দেবের নামে একটা বড় তোরণ বানাচ্ছি, সেখানে চৈতন্য দেবের মূর্তি থাকবে। তার নাম দিয়েছি চৈতন্যধাম।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মন্দিরের ঠাকুরটা তৈরি হবে মার্বেলের। তবে পুজোর জন্য নিম কাঠে ঠাকুর তৈরি হবে। কে পুজো করবে, কীভাবে হবে— সব ঠিক হবে। আমার সব কাজই শেষের পথে। তবে আমাকে এবং মুখ্যসচিবকে একবার যেতে হবে ট্রাস্টি বোর্ড তৈরির জন্য। কালীঘাট স্কাইওয়াক চাইলে আমি কালই উদ্বোধন করতে পারি, কিন্তু করব না। অসম্পূর্ণ কাজ আমার পছন্দ নয়।’

এদিন রাজ্য পুলিশের ভূয়ষী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশের নিরলস পরিশ্রমের প্রশংসা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের পুলিশ ১০ দিন ছুটি পায়, আমি সেটা বাড়িয়ে ১৫ দিন করতে বলবো। ফায়ার ব্রিগেড এবং পৌরসভার কর্মীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে। এটি তাঁদের প্রতি আমাদের সম্মান।’ এ প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন দুর্গোৎসবেও পুলিশ থেকে প্রশাসনিক কর্তারা, কেউই ছুটি পান না। বিরোধীদের উদ্দেশে কটাক্ষের সুরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু ভোটের সময় পাহারাদার হই না, আমরা ৩৬৫ দিনের পাহারাদার। মানুষ যখন পথে থাকেন, রাত জেগে ঠাকুর দেখেন তখন আমরাও চতুর্থী থেকে রাত জাগি।’ আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য রাজ্য সরকারের অবদানও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ‘যখন তৃণমূল ক্ষমতায় আসেনি তখন উপজাতিদের জন্য পৃথক দপ্তর ছিল না এবং আদিবাসী উন্নয়নে বাজেট ছিল মাত্র ১৬০ কোটি টাকা। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ১০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও বন্য অধিকার আইনের মাধ্যমে আমরা প্রায় ৪৯ হাজার আদিবাসী মানুষকে বনের পাট্টা দিয়েছি এবং ৫১টি কমিউনিটি পাট্টা দিয়েছি।’ সাঁওতালি ভাষার স্বীকৃতি লাভের ঘটনাতেও তৃণমূল সরকারের অবদানকে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

নাম না করে এদিন বিজেপিকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ম মানেন না, দুর্গাপুজো করতে দেন না! স্বামীজিকে নিয়ে নির্বাচন করো? স্বামীজির বাড়িটা অধিগ্রহণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, তোমাদের সরকার নয়।’ এরপরই নিজ উদ্যোগের খতিয়ান তুলে মমতা বলেন, ‘দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক করেছি, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল! কলকাতা কর্পোরেশনের সাহায্যে আমাদের সরকার এর অধিগ্রহণ করেছে। দার্জিলিংয়ে ভগিনী নিবেদিতার মৃত্যুস্থান চলে গিয়েছিল বিমল গুরুংয়ের হাতে, আমি তা ফিরিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দিয়েছি। কলকাতায় সিস্টার নিবেদিতার বাড়ি অ্যাকুইজিশন করতে হয়েছে। শোভাবাজারের মায়ের বাড়িতে সকলের প্রবেশাধিকার অবাধ করেছি।’ এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ,  স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, বিধাননগরের সিপি মুকেশ কুমার, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বোস, বীরবাহ হাঁসদা প্রমুখ।

এদিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাতে ধামসা, মাদল তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা এদিন বলেন, ‘রাজ্যে ২১ লক্ষ ৬২ হাজার ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। সাঁওতালি ভাষাকে আমরাই স্বীকৃতি দিয়েছি। আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে অনেক আইসিডিএস সেন্টার করা হয়েছে।’ এছাড়াও তিনি জানান, বন্য অধিকার আইনের মাধ্যমে প্রায় ৪৯ হাজার আদিবাসী মানুষকে ফরেস্ট পাট্টা এবং ৮৫১ কমিউনিটি পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামে কবি সাধু রামচাদ মুর্মুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় ও নয়াগ্রামে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামে কলেজ করা হয়েছে। ১ কোটি ৬২ লক্ষের বেশি কাস্ট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। এদিন মমতা জানান, তিনি সাঁওতালি ভাষা শেখার চেষ্টা করবেন। ভাষাটিকে একটু শক্ত বলেও মনে হয়েছে তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশেই এদিনের অনুষ্ঠানে সাঁওতালি ভাষায় কথা বলেন বীরবাহা হাঁসদা।