গ্যাংটক, ১৫ জুন– সাম্প্রতিক বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উত্তরপূর্বের পার্বত্য এলাকার রাজ্য সিকিম। একাধিক রাস্তায় ধস নামে। ধসে অবরুদ্ধ হয়ে যায় রাজ্যের প্রধান সড়কপথগুলি। বড় বিপর্যয়ের মুহূর্তে অনেক পর্যটককে ঊদ্ধার করা সম্ভব হলেও শেষ মুহূর্তে আটকে পড়েন প্রায় ১২০০ পর্যটক। উত্তর সিকিমের সঙ্গে সংযোগকারী একটি প্রধান সেতু ভেঙে পড়ায় রাজ্যের উত্তর অংশের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়কপথে এবার সেই যোগাযোগ স্থাপন করল বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন অর্থাৎ বিআরও। মাত্র দুই দিনের মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে উত্তর সিকিমে যাওয়ার সেই প্রধান সেতুটি। ফল আশার আলো দেখা দিল আটকে থাকা পর্যটকদের মধ্যে। যদিও ওই পর্যটকরা কবে ফিরতে পারবেন সেবিষয়ে নিশ্চিতভাবে এখনও কিছুই জানা যায়নি। তবে ধসের কারণে সিকিমের বহু রাস্তা এখনও ভেঙে পড়ে রয়েছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে লাগবে আরও কিছু সময়।
একটানা বৃষ্টি ও ধসের কারণে বুধবার ভেঙে পড়ে সাঙ্কলনের গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি। এই সেতুটি উত্তর সিকিম সহ ডংজুর বিস্তীর্ণ এলাকার যোগাযোগ রক্ষা করে। এই সেতু দিয়েই এইসব এলাকায় যাতায়াত করেন পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি ভেঙে পড়ার কারণে উত্তর সিকিমের সঙ্গে বাকি সিকিমের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমনকি সিকিমের এই অংশের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র লাচুং, চুংথাঙে আটকে পড়েন প্রায় ১২০০ পর্যটক। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন বিদেশী পর্যটকও রয়েছেন। এবার তাঁদের উদ্ধার করার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত চারদিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে সিকিমে। তার জেরে ধস নেমেছে সেখানে। বহু পাহাড়ি রাস্তা ধসে গিয়েছে। ধস নেমে ডিকচু, সাংকলন থেকে টুং, অন্য দিকে মঙ্গন থেকে সাংকলন, সিংথাম থেকে রাংরাং, রাংরাং থেকে টুং যাওয়ার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সিকিমের উত্তর অংশে যাতায়াতের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। আটকে থাকা পর্যটকদের সেনা বাহিনীর কপ্টারে আকাশপথে উদ্ধারের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে সড়কপথে উদ্ধারের জন্য দ্রুত সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত দুই দিন ধরে বিআরও কর্মীরা আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে সেতু নির্মাণ করে বড়সড় সাফল্য দেখান। শুরু হয় রাস্তা মেরামতির কাজও। টুং এলাকায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা ইতিমধ্যে সারানো সম্ভব হয়েছে। চুংথাং থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত রাস্তার ধ্বংসাবশেষ সরানো ও মেরামতির কাজ চলছে। অন্যদিকে নাগা থেকে লাংখাখোলা পর্যন্ত রাস্তা আগেই মেরামত হয়ে গিয়েছে। ফলে আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধারের কাজ সহজ হল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সিকিমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নতুন করে ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।