• facebook
  • twitter
Sunday, 30 March, 2025

বিনিয়োগ বান্ধব বাংলার ‘দিদি’তেই মজেছেন বিলেতের শিল্পপতিরা

সত্যম রায়চৌধুরী বলেন, ‘একটি ফোন কলের দূরত্ব’

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

এ যেন উলটপুরাণ। জ্যোতিবাবু বারবার বিলেত তথা বিদেশ সফর করে যা সম্ভব করতে পারেননি, সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে চলেছেন বাংলার প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনিয়োগে ‘দিদি’র বাংলাতেই ভরসা রাখলেন বিলেতের শিল্পপতিরাও। রাজ্যে তাঁর তৈরি বিনোয়োগ বান্ধব পরিবেশে মজেছেন তাঁরা। লন্ডনের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাঁদের বার্তায় স্পষ্ট, বাংলা মানে বাণিজ্য ও শিল্পের প্রকৃত গন্তব্যস্থল। সেজন্য অতীতের সব বাধা ও আশঙ্কার গন্ডি ভেঙে বেরিয়ে আসছেন তাঁরা। তাঁরা মনে করেন, বর্তমান বাংলায় শিল্প বিনোয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন আর কোনও ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই। বরং মুনাফা তৈরির এটাই আদর্শ জায়গা। সেখানে উপস্থিত বাংলা তথা ভারতীয় শিল্পপতিদের আশ্বাস বাণীতে সেই উৎসাহ দ্বিগুণ হয়েছে। এভাবেই দিদির নেতৃত্বে সাহেবের দেশে বঙ্গের বিনিয়োগ পরিবেশের একটি স্বচ্ছ ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হল।

সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দফা উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বি টু বি এবং জি টু জি বৈঠকগুলি শুরু করিয়ে দেন। বার্কলে সংস্থার সিইও স্টিফেন ফ্লাহার্টি বাংলায় তাঁদের বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। মার্টিন রাইট, যিনি ব্রিটেনের প্রথম সারির এনার্জি স্টোরেজ এবং টেকনোলজি সংস্থা গ্রাভিত্রিসিটির চেয়ারম্যান তিনিও আগ্রহী বাংলা সম্পর্কে। মুখ্যসচিব-সহ শিল্পসচিব এবং বাকি আধিকারিকদের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছেন বাংলায় বিনিয়োগের হাল হকিকত। স্কটিশ লাইফ সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সিইও স্কট জনস্টোন বাংলায় ম্যানুফ্যাকচারিং এবং মেডিক্যাল সেক্টরে বিনিয়োগের খুঁটিনাটি জেনে নিচ্ছেন। লন্ডনের প্রখ্যাত ভিসুভিয়াস কোম্পানির শীর্ষকর্তা হেনরি নল্স তাঁদের সংস্থা বাংলায় ইউনিট খোলার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। তিনিও এই বাণিজ্য বৈঠকের শুরু থেকেই রয়েছেন। সব মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বদলে যাওয়া বাংলায় বিনিয়োগের দরজা আরও প্রশস্ত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত মোগল আমলে ব্রিটিশরা যখন বাণিজ্য ও শিল্পের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই তাঁদের পাখির চোখ ছিল নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বাংলা-বিহার-ওড়িশার প্রতি। তখন থেকেই তাঁরা এখানে আধুনিক শিল্প কারখানা ও বাণিজ্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে ওঠেন। সেজন্য একসময় উপনিবেশ স্থাপন থেকে সাম্রাজ্য বিস্তার, এমনকি বৃটিশ শাসনের অধীনে ভারতবর্ষে আলাদা রাষ্ট্র পরিচালনা ইতিহাসের পাতায় আজও অমলিন। এবার সেই স্বাধীন ভারতের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বিলেতে গিয়েছেন এখানে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে। আর তাঁর হয়ে সেখানে সওয়াল করেছেন বাংলাতে পূর্বেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সফলতা পাওয়া শিল্পপতিরা। একে একে তাঁরা আহ্বান জানিয়েছেন সেখানকার শিল্পপতিদের।

মঙ্গলবার লন্ডনের শিল্প বৈঠকে উপস্থিত হন বাংলার শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরী, হর্ষবর্ধন নেওটিয়ারা। তাঁরা বাংলায় বাণিজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন। অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন বলেন, ‘বাংলায় শিল্প বিনিয়োগের জন্য তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যে বিশ্বাস করেন। মানুষ এখানে অত্যন্ত নিরাপদ বোধ করেন। মুখ্যমন্ত্রী রাস্তা, বিদ্যুৎ, বন্দর, জল সরবরাহের মতো পরিষেবার অনেক উন্নতি করেছেন। কলকাতায় আসুন, বিনিয়োগ করুন। এখানকার অর্থনৈতিক পরিবেশ খুব ভালো।’ বলে রাখা ভালো, কলকাতায় নেওটিয়া গ্রুপের একাধিক ব্যবসা রয়েছে। সেই ব্যবসাগুলির বিস্তারে রাজ্যের শিল্পবান্ধব পরিবেশ হর্ষবর্ধন নেওটিয়ার পক্ষে অনুকূল হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করে সেখানকার শিল্পপতিদের আশ্বস্ত করেন।

এদিন বাংলার শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরী নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এই সম্মেলনে। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে আমরা সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা ভাবি। মুখ্যমন্ত্রীকে বলি ২০২১ সালে। সে বছরের ২৯ নভেম্বর তিনি বিধানসভায় বিল পাশ করিয়ে দেন। পরের বছর জানুয়ারি মাসে নেতাজির ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে আমরা স্পোর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি। এখন সেটা প্রায় তৈরি। সরকারের সঙ্গে আমাদের শুধুমাত্র একটা ফোনকলের দূরত্ব। বাংলা বোঝে বাণিজ্য। মুখ্যমন্ত্রী সবসময় আমাদের সাহায্য করেন।’

লন্ডনের এই শিল্প বৈঠকে আরপি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান শাশ্বত গোয়েঙ্কা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী শিল্প বিস্তারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। যে কোনও সময় দরকারে তাঁকে পাওয়া যায়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি। তাঁর আমলা, প্রশাসনও শিল্পবান্ধব। আপনারাও আসুন বাংলায়, বুঝতে পারবেন এখানকার সুবিধা কত।’

উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে ছ’দিনের লন্ডন সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর সফরসঙ্গী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের বিশেষ সচিব গৌতম সান্যাল, শিল্প সচিব বন্দনা যাদব, ডাইরেক্টর অফ সিকিওরিটি পীযূষ পাণ্ডে। এছাড়াও রয়েছেন ডব্লিউবিটিসি-র আধিকারিকরা। রয়েছেন শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরী, মেহুল মোহানকা, উমেশ চৌধুরী, সন্তোষ বাঙ্গারও। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবারের শিল্প সম্মেলনে লন্ডন থেকেও বহু শিল্পপতি যোগ দেন। সেই তালিকায় রয়েছেন চন্দ্রমোহন ধানুকা (এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান, ধানসিঁড়ি ভেঞ্চারস), হর্ষবর্ধন আগরওয়াল (প্রেসিডেন্ট, ফিকি, ভাইস চেয়ারম্যান, ইমামি গ্রুপস), হর্ষবর্ধন নেওটিয়া (চেয়ারম্যান, অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপ), কে কে বাঙ্গুর (গ্রাফাইট ইন্ডিয়া), মেহুল মোহানকা (এমডি, টেগা ইন্ডাস্ট্রিজ), প্রশান্ত বাঙ্গুর (চেয়ারম্যান, ফিকি, ডব্লিউবিএসসি, ভাইস চেয়ারম্যান, শ্রী সিমেন্টস), প্রশান্ত মোদি (ভাইস চেয়ারম্যান ও এমডি, জিইইসিএল), রুদ্র চট্টোপাধ্যায় (এমডি, লক্ষ্ণী গ্রুপ, চেয়ারম্যান, ওবিইইটিইই), সঞ্জয় বুধিয়া (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, প্যাটন ইন্টারন্যাশনাল), সত্যম রায়চৌধুরী (চ্যান্সেলর, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়), শাশ্বত গোয়েঙ্কা (ভাইস চেয়ারম্যান, আরপি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপ), তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা (প্রেসিডেন্ট, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ), উজ্জ্বল সিনহা (এমডি, জেনেসিস অ্যাডভারটাইজিং), উমেশ চৌধুরী (ভাইস চেয়ারম্যান অ্যান্ড এমডি, টিটাগড় রেল সিস্টেমস), জ্যোতি ভিজ (ডিরেক্টর জেনারেল, ফিকি) এবং মৌসুমী ঘোষ (ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, ফিকি)।