দ্রোহের কার্নিভালের পর এবার ব্রিগেড সমাবেশ?

আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ছেড়ে বিদেশেও। বিচারের দাবিতে ক্রমশই সুর চড়াচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ১০ দফা দাবি পূরণের দাবিতে চলছে আমরণ অনশন। কিন্তু এর পর? আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে কী পদক্ষেপ করতে চলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা? জানা যাচ্ছে, দ্রোহের কার্নিভালের পর এবার ব্রিগেড সমাবেশেরও ডাক দিতে চলেছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। তাদের বিবৃতিতে এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে বলে খবর।

মঙ্গলবার একদিকে যখন দুর্গাপুজোর কার্নিভাল উপলক্ষে গান-নাচ-আলোর ঝলকানিতে গমগম করছে রেড রোড, ঠিক তখনই বিচারের দাবিতে দ্রোহের কার্নিভালের ডাক দিয়ে পথে নামেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। জনস্রোতে ভাসে শহরের রাজপথ। আট থেকে আশির মুখে জোরালো হয় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। মানববন্ধনে জনস্রোত, পুলিশের সঙ্গে বচসা, ডিসি সেন্ট্রাল সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের ঘিরে মানুষের বিক্ষোভ সহ একাধিক বিচ্ছিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে শহর কলকাতা। সব কিছুর মাঝে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। আমজনতাকে পাশে পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররাও।

বুধবার সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। শুধু ধন্যবাদ জ্ঞাপনই নয়, বিবৃতির শেষে স্পষ্ট উল্লেখ, ‘সেই দিন আর বেশি দেরী নেই যেদিন আপনারা ব্রিগেড সমাবেশও সফল করবেন।’ এর পরই জল্পনা শুরু হয়, তাহলে কি দ্রোহের কার্নিভালের পর এবার ব্রিগেড সমাবেশের পথে হাঁটবেন জুনিয়র ডাক্তাররা?  জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর বিবৃতি অন্তত সেই কথাই বলছে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ, ‘কলকাতা থেকে জেলা, প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে গোটা রাজ্য। আমাদের এই অদলীয় আন্দোলন এবার ব্রিগেড প্যারেড দখল করবে।’ যদিও ব্রিগেড সমাবেশের তারিখ বা সময় কিছুই জানায়নি জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। তবে ব্রিগেড সমাবেশে যে বিক্ষোভের আগুন আরও বেশি করে জ্বলবে এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই বলেই জানিয়েছে ওয়াকিবহলমহল।


এদিকে অনশন মঞ্চে একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। শুধু ধর্মতলার বুকেই নয়, আমরণ অনশনের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররাও। মঙ্গলবারই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে জুনিয়র ডাক্তার সৌভিককে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অলোক বর্মা নামে আরও এক চিকিৎসক। ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনওভাবেই অনশন প্রত্যাহার নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

সোমবার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সহ সব চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। কিন্তু তাতেও মেলেনি সুরাহা। বৈঠক শেষে কার্যত হতাশ হয়েই ফেরেন চিকিৎসকরা। যদিও মুখ্যসচিবের দাবি অনুযায়ী, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০টি দাবির মধ্যে ৭টি দাবিই মানা হয়েছে। বাকি ৩টি দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে ডাক্তাররা টাইমলাইন চাইলেও তা দিতে নারাজ ছিলেন মুখ্যসচিব। এই আবহে কবে জট কাটবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

একেই আমরণ অনশনের জেরে অসুস্থতা বাড়ছে ডাক্তারদের, তার মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়া। বুধবার বিকেল হতেই আকাশ কালো করে ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। দোসর দমকা হাওয়া। দুর্গাপুজোয় সেই অর্থে বৃষ্টি না হলেও লক্ষ্মীপুজোয় বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়-বৃষ্টি চিন্তা বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের। কারণ ধর্মতলায় ত্রিপল খাটিয়ে অস্থায়ী মঞ্চেই দিন কাটছিল অনশনকারী ডাক্তারদের। কিন্তু আচমকাই দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টিতে এক নিমেষে এলোমেলো হয়ে যায় মঞ্চ। ত্রিপলে ফুটো হয়ে যাওয়ায় জলে ভিজে যাচ্ছে বিছানা। বৃষ্টির মধ্যেই চলে ত্রিপল মেরামতের কাজ। পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন ডাক্তাররা। এই আবহে সব মহল প্রশ্ন তুলছে, কবে ১০ দফা দাবি পূরণে তৎপর হবে প্রশাসন? উত্তর কবে মিলবে তা জানা নেই। তবে রাত দখল, দ্রোহের কার্নিভালে যে বিপুল মানুষ অংশ নিয়েছে সেই ছবি ব্রিগেড সমাবেশেও দেখা যাবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।