দেবাশিস দাস : এমন একটা ধারণা চালু আছে যে পরিবহন দফতর লোকসানে চলে। কিন্তু তা একেবারেই ঠিক নয়।গত কয়েকবছরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে যথেষ্ট আয় বেড়েছে পরিবহন দফতরের । সরকারের পক্ষ থেকে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, একটু দেখে নেওয়া যাক।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় আটটি চেকপোস্ট রয়েছে, যেখান দিয়ে পণ্যবাহী লরি বাংলাদেশ যাতায়াত করে। একসময় এই চেক পোস্টগুলিতে গড়ে উঠেছিল মাফিয়া রাজ। সীমান্তের ৮-১০ কিলোমিটার আগেই পণ্য ভর্তি লরিগুলিকে আটকে দিত তারা। ৩০ থেকে ৪০ দিন ধরে সার বেঁধে আটকে থাকত এইসব লরি। ওয়ার হাউস অর্থাৎ গুদাম পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছিল তারা। ওই সব লরির পণ্য নামিয়ে রাখা হতো গুদামে। তারপর মাফিয়ারা নিজেদের লরিতে সেই সব পণ্য ভর্তি করে পাঠাতো বাংলাদেশে। এতে পণ্য ভর্তি মূল লরিগুলির প্রতিটির লোকসান হতো প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্ত এটাই তখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অভিযোগও আসত প্রচুর।
এই মাফিয়াচক্র ভাঙতে রাজ্য সরকার পরিবহন দফতরের জন্য ‘ সুবিধা পোর্টাল ‘ চালু করে। বাংলাদেশগামী পণ্য ভর্তি লরিগুলি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে সেখানে রেজিস্ট্রেশন করায়। তার ফলে ওই মাফিয়া- দালালদের আর কিছু করার থাকে না। লরিগুলি বিনা বাধায় বাংলাদেশে যেতে পারে। তাতে ‘সুবিধা পোর্টাল ‘এর মাধ্যমে রাজ্য সরকারের যেমন আয় বেড়েছে, তেমনি গতি বেড়েছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরেই পরিবহন দফতর আয় করেছে ২৭৬ কোটি টাকা।
এই মাফিয়া চক্রের পক্ষ থেকে পূর্বাবস্থা জারি রাখার চেষ্টা যে করা হয়নি,তা নয়। কিন্তু কেন্দ্রের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস এরা বিএসএফের সঙ্গে পরিবহন দপ্তরের কর্তাদের আলোচনার পরে ‘সুবিধা পোর্টাল’ চালু করে রাজ্য সরকার। পরিবহন দফতরের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে আয় হয়েছিল ২ হাজার৬৭১ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে এই আয় দাঁড়িয়ে ছিল ৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকায়। ২০২৩-২৪ এ আয় গিয়ে পৌঁছেছে ৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকায়। আর চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাত্র এই দুই মাসেই পরিবহন দফতরের হাতে ৬৫৮ কোটি টাকা। শুধুমাত্র সুবিধা পোর্টাল থেকেই গত দুই আর্থিক বছরে এসেছে ১৮৪ কোটি এবং ২৭৬ কোটি টাকা। চলতি বছরে মাত্র দুই মাসে এসেছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা।
রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী জানালেন, পরিবহন দফতরের অধীনে এনফোর্সমেন্টে র কার্যকলাপ বাড়ানো হয়েছে। লরিতে নির্দিষ্ট পরিমাণের অতিরিক্ত মাল বোঝাই করলে তা জরিমানা যোগ্য অপরাধ। ২০২৩-২৪ এ এরকম ৮ লক্ষ ৯৬ হাজারটি গাড়ি পরীক্ষা করা হয়েছে। এ বছরে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ওই সংখ্যা আরও অনেক বেড়েছে। মফস্বলে এবং গ্রামগঞ্জে প্রাইভেট গাড়ি র কর বাকি পড়ে থাকে। সেখান থেকে কর আদায়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, অতিরিক্ত মাল বোঝাই,, ট্রাফিক আইন ভাঙ্গা ইত্যাদি ক্ষেত্র থেকে ২০২২-২৩ এ আয় হয়েছিল ১৬৭ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১৭৪ কোটি টাকায়। পরিবহন মন্ত্রী বলেন, সবমিলিয়ে চলতি আর্থিক বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।