লােকসভা নির্বাচনের ধাক্কা সামলে উপনির্বাচনে তিনে তিন পেয়ে রাজ্যে সবুজ ঝড় উঠিয়েছে তৃণমূল। তবে এই জয়ে নিজের দলের মানুষদের ইতিবাচক ভূমিকার চেয়েও বিজেপির নেতিবাচক ভূমিকাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল। বলেছেন বিজেপি’র অহংকার আর ঔদ্ধত্যের রাজনীতিকে ভালােভাবে মেনে নেয়নি বাংলার মানুষ। এবারের উপনির্বাচনে এই সাফল্যের নেপথ্যে আবারও সেই মানুষকেই কৃতিত্ব দিলেন তৃণমূল নেত্রী। আর তাই এই জয় মা-মাটি- মানুষকেই উৎসর্গ করলেন। বললেন, এটা জনতার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। আমরা মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কালিয়াগঞ্জ এবং খড়গপুর কোনওদিনই তৃণমূলের দখলে ছিল না। বিশেষ করে লােকসভা ভােটে এই দুই বিধানসভাভিত্তিক ফল দেখে মনােবল ভেঙে গিয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের। এমনকী করিমপুরের উপনির্বাচনে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, তার ফলেও করিমপুরে জয় নিয়ে পুরােপুরি নিশ্চিত ছিল না তৃণমুল। কিন্তু তিনটি উপনির্বাচনে বিপুল জয় আসায় কর্মীদের মনে স্বভাবতই উচ্ছ্বাস।
কিন্তু সেই উন্মাদনায় লাগাম দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী ফল ঘােষণার পর বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নবান্ন থেকে বেরােনাের সময় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোথাও বিজয়মিছিল বের করা যাবে না। আমরা বিজেপির মতাে নই। কোনও ধ্বংসলীলার সঙ্গে তৃণমূল যুক্ত হবে না। গঠনমূলক সহযােগিতা করা হবে। আসলে পােড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন লড়াইটা আসলে একুশের। তাই এই উপনির্বাচনের জয়ে কর্মীদের সংযত থাকার নির্দেশ দিলেন।
তবে জয়ে উচ্ছাস না দেখালেও বিজেপির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিতে পিছপা হননি তৃণমূল সুপ্রিমাে। এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে বিশ্লেষণী আলােচনায় মমতা বলেছেন, একুশ বছরে কালিয়াগঞ্জ বা খড়গপুরে আমরা একটা আসনও পাইনি কোনওদিন। এই প্রথম ওখানকার মানুষ আমাদের ভালােবেসে, বিশ্বাস রেখে ভােট দিয়েছেন।
আমরা নম্রভাবে কাজ করে যেতে চাই। ওখানকার কর্মীরাও ভালােভাবে কাজ করেছে। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে ভােট দিয়েছেন। এটা বাংলার সভ্যতা, সংহতি, সম্প্রীতি, সংস্কৃতির জয়।
লােকসভা নির্বাচনে খড়গপুরে ৪৫,১৩২ ভােটে এবং কালিয়াগঞ্জে ৫৬,৭৬২ ভােটে জিতেছিলেন বিজেপির প্রার্থীরা। সেখানে এবার তৃণমূল এগিয়ে গিয়েছে। কালিয়াগঞ্জ, খড়গপুরের বিপুল ব্যবধান পেরিয়ে এই যে জয়, তা বিজেপির। এনআরসি, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরির কারণেই?
এর উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এক এক জায়গায় এক এক ধরনের ফ্যাক্টর কাজ করেছে। লােকসভা ভােটে বিজেপি যা করেছে, তা নিয়ে এখন কথা বলার কোনও অর্থ নেই। সেই সময় ইভিএম মেশিনে কারচুপি হয়েছিল। মমতা প্রশ্ন তােলেন, কেন এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ইভিএম সেট করা হয়েছিল? কালিয়াগঞ্জের রাজবংশীরা আমাদের ভােট দিয়েছে। আদিবাসীরা তৃণমূলে ভরসা রেখেছে। মুসলিমরা জানে তাদের সংস্কৃতিকে তৃণমূল সম্মান করে। হিন্দুরা জানে তৃণমূল সর্বধর্ম সমন্বয় করতে জানে। অবাঙালিরা জানে, তাদের বাংলায় সবকিছু সুযােগ সুবিধে পাচ্ছে। তাই জাতি, ধর্ম নির্বিশেযে মানুষ আমাদের ভােট দিয়েছে।
অন্যদিকে ভিনরাজ্যে বাঙালিদের যেভাবে খুন করা হয়েছে, তার জবাব দিয়েছে মানুষ। সেইসঙ্গে এনআরসি, নাগরিকপঞ্জী সংশােধন ইত্যাদি বিষয়গুলিকে মানুষ মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতার বলে বিজেপি যা খুশি তাই করতে চাইছে। যারা এতদিন ভােট দিয়ে সরকার গড়ল, বিধায়ক সাংসদ নির্বাচন করল, তাদেরকেই বলা হচ্ছে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। এই এনআরসি ইস্যুর বিরুদ্ধে আমরা প্রচার অভিযান চালিয়েছি। তবে তিন উপনির্বাচন কেন্দ্রের জয় যে আগামী বছর পুরসভা নির্বাচন আর একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে তৃণমূলকে অনেকটা এগিয়ে রাখল সেকথা স্পষ্ট হয়েছে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই। তৃণমূলনেত্রী এদিন বলেন, লােকসভা নির্বাচনে বাংলায় কয়েকটি আসন জিতে বিজেপি বলেছিল ২০২১-এ তৃণমূল হবে সাফ। আমি বলছি ২১-এর আগে এই ১৯-এর ধাক্কা আগে সামলাক।