এখনও শুকোয়নি ভাটপাড়ার ক্ষত। গত এক মাস যাবৎ সেখানে লাগাতার চলছে রাজনৈতিক হিংসা। ইতিমধ্যে চলমান এই রাজনৈতিক হিংসায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যপালও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফলে ভাটপাড়া কাণ্ড নিয়ে রাজ্য রাজনীতি যখন উত্তাল, তখনই আমডাঙার বহিসগাছি এলাকার এক বিজেপি কর্মী খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হল রাজ্য রাজনীতি।
মৃত ওই বিজেপি কর্মীর নাম নাজিমুল করিম (২৩)। স্থানীয় সূত্রের খবর, নাজিমুল ও তার পরিবার স্থানীয় প্রভাবশালী সিপিএম নেতা জাকির বল্লুকের নিকটাত্মীয়। সেই সূত্রে তাঁরা দীর্ঘদিনের সিপিএম সমর্থক। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই আমডাঙার বহিসগাছি এলাকায় সিপিএমের দাপট কমতে থাকে।
এক সময় জাকির বল্লুকও গ্রেফতার হয়ে যায়। তারপর থেকে নাজিমুল করিমরা গত কয়েক বছর ঘরছাড়া বলে খবর। কিন্তু এবারের লােকসভা নির্বাচনে তারা সিপিএম ছেড়ে বিজেপির ঝান্ডা ধরে। এমনকি এলাকায় বিজেপির ঝান্ডাও লাগায় নাজিমুল। এরফলে শাসক দলের রােষানলে পড়ে ওই যুবক বলে দাবি মৃতের পরিবারের।
অভিযােগ, শুক্রবার বিকেলে নাজিবুল বাড়ি থেকে ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিল। সে সময় হঠাৎই বেশ কয়েকজন তৃণমূল সমর্থক পথ আটকায় তাঁর। এরপর তাঁকে ঘিরে ধরে চলে ব্যাপক মারধর। এদিকে এই মারধরের ঘটনা দেখতে পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এলাকাবাসীরা। তারা নাজিমুলকে উদ্ধার করে প্রথমে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাঁকে আরজিকর মডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। শেষে শনিবার ভােরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আহত নাজিবুল। এই ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অভিযােগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ পৌঁছলেই তাদের উপর ইটবৃষ্টি শুরু করে এলাকাবাসী। ফলে বহিসগাছির ওই বিজেপি সমর্থকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গােটা এলাকা।
অন্যদিকে, এই ঘটনার জেরে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক চাপানউতাের। শনিবার বারাকপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং ১০ লক্ষ টাকা সাহায্যের ঘােষণা করেন। এরপর তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ভাটপাড়ার মতােই তৃণমূল এই খুনের ঘটনার পিছনে রয়েছে।
পাশাপাশি তিনি এলাকার পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, এখানকার পুলিশ কর্তারা সচেতন না হলে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। তাঁর আরও আশঙ্কা, আমডাঙা আগামী দিনে নন্দীগ্রাম হবে। আর তাহলে বারাকপুর তার নেতৃত্ব দেবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বর্তমান সরকার আর ছয় মাসও টিকবে না। যদিও শাসক দলের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযােগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ প্রসঙ্গে বারাকপুরের সদ্য দায়ত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা তথা জেলা পর্যবেক্ষক বিধায়ক নির্মল ঘােষ বলেন, এটা বিজেপির অন্তর্কলহ। সিপিএম থেকে আসা হার্মাদ নব্য বিজেপিদের সঙ্গে আদি বিজেপির ঝামেলার জন্য এই কাণ্ড ঘটেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। রাজ্যকে অশান্ত করতে বিজেপি এ ধরনের চক্রান্ত করছে বলে জানান তিনি।
সব মিলিয়ে ভাটপাড়ার ক্ষত শুকনাের আগেই আমডাঙার বহিসগাছিতে বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনা নতুন করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠল প্রশাসনের কাছে।