চার পুরনিগমেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে রাজ্যের শাসকদল। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন পরে বামেদের থেকে শিলিগুড়ি পুরনিগম ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।
দলের এই বিরাট সাফল্যের আবহেই মঙ্গলবার সকালে উত্তরকন্যায় শিলিগুড়ি পুরসভার জয়ী কাউন্সিলদের সঙ্গে দেখা করে নম্র থাকার নির্দেশ দিলেন মমতা। বললেন মাথা নত করে মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করার বার্তা দিলেন।
একইসঙ্গে মমতার ভাবনা, কলকাতা, রাজারহাট, নিউটাউনের মতো করে শিলিগুড়িকে গড়ে তুলতে হবে। সোমবারই শিলিগুড়িকে ঝাঁ চক্চকে করে গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন মমতা।
মঙ্গলবারও কলকাতা শহরের মতোই শিলিগুড়িকেও উন্নয়নের মোড়কে মুড়ে ফেলার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কথায়, তৃণমূলের হাতেই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ঘটেছে এদিন আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকের আগেই নব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফটো সেশনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
নতুন শিলিগুড়ি কেমন হবে সেই সম্পর্কে নিজের পরিকল্পনার কথা শেয়ার করেন তাঁদের সঙ্গে। উত্তরবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে উত্তরকন্যায় বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উন্নয়নের স্বার্থে একযোগে কাজের বার্তা দিতে মঙ্গলবারের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু, আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দশরথ তিরকে, মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিপ্পা।
তবে এদিন ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় থাকার জন্য এদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মনোজ টিপ্পা। বৈঠকে উপস্থিত দুই বিরোধী আদিবাসী নেতার কাছ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন আদিবাসী পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন।
আদিবাসীদের জন্য চালু প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিজেপি প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আলোচনা সারেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আদিবাসীদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার একাধিক কাজ করছে আগামী পাঁচ বছরে আদিবাসীদের জন্য ২০ লক্ষ নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।
সেইসঙ্গে উত্তরবঙ্গে অলচিকি ভাষায় ৫০০ টি স্কুল করার বিষয় নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার, উত্তরকন্যায় জনপ্রতিনিধিদের যোগদান নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে যেখানে বিজেপির বিরোধীরা ডাক পান না বলেই অভিযোগ করে থাকেন।
বাস্তবিকই প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধীদের আমন্ত্রণ জানানোর নজির অতীতে খুব একটা নেই।
সেক্ষেত্রে চার পুরনিগমের তৃণমূলের বিপুল জয়ের পরে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের পুরনিগমে ‘অশোক মডেল’-এর মুখ থুবড়ে পড়ার পরে, মমতার বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানানো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
অনেকেই ভাবছেন রাজনৈতিক বিরোধিতা সরিয়ে যদি বিরোধীরাও হাতে হাত রাখেন, তাহলে উন্নয়নের পথই মসৃণ হবে।
যদিও উত্তরবঙ্গে আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকে বিরোধীদের আহ্বান জানানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা।
বৈঠক শেষেই খগেন মুর্মু বলেন, বৈঠক করলাম মানেই তৃণমূলে যাব এমনটা নয়। আমি বিজেপির সঙ্গেই রয়েছি। আমি যে যে প্রকল্পগুলির কথা বলেছি, সেগুলি রূপায়নের ক্ষেত্রে সত্যিকারের সদর্থক উদ্যোগ নিলে সন্তুষ্ট হব।
অন্যদিকে এদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, এদিন পরিষদের বৈঠকে মুখ্যসচিবসহ বিভিন্ন আধিকারিক, উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আদিবাসীদের জন্য রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গে মমতা বক্তব্য আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর বন্ধ করা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদের নিয়ে এদিনের বৈঠক নিয়ে মমতা জানান, আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সদস্যরা অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা যে পরামর্শ দিয়েছেন , তা আগামী মিটিং এর আগে কার্যকর করা হবে।
অলচিকি ভাষায় পঠনপাঠনের জন্য আগামী পাঁচ বছরে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘোষণা করেন, আগামী পাঁচ বছরে তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য ২০ লক্ষ ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। যাঁদের মাটির বাড়ি রয়েছে, তাঁদের বাড়ি পাকা করা হবে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের জাহের খান ও মাজি থানের দরিদ্ররা প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এছাড়া এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে , ১০০ টি নতুন স্কুল তৈরি করা হবে উত্তরবঙ্গে।
তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য আগামী তিন বছরে একশোটি নতুন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল তৈরির সিদ্ধান্তও এদিন নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন, এপ্রিলে বিশ্ববঙ্গ বাণিজা সম্মেলনের আগে উত্তরবঙ্গে শিল্প বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।