উপনির্বাচনে পদ্ম লুটিয়ে জোড়াফুল ফুটেছে বাংলার ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে। একদিকে যেমন মাদারিহাটের মতো উত্তরের আসনে প্রথম বার জয়ী হয়েছে তৃণমূল, অন্যদিকে হাড়ায়োর মতো আসনে জামানত জব্দ হয়েছে পদ্ম প্রার্থীর। এক কথায়, বিধানসভায় বিধায়কের সংখ্যা আরও কমছে গেরুয়া শিবিরের। তা সত্ত্বেও শাসক শিবিরের কাছে ঝুঁকতে নারাজ বিজেপি। কোন রণকৌশলে বিজেপিকে বঙ্গের বুকে ধূলিসাৎ করতে সচেষ্ট তৃণমূল? সেই উত্তর খুঁজতেই এবার বসছে বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠক। আজ অর্থাৎ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। আবার এই দিনই দুপুর দু’টোয় বিজেপির এই পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শীতকালীন অধিবেশনে শাসকের বিরুদ্ধে ঝাঁজ বজায় রাখতেই কি দ্রুত বৈঠকে বসছেন শুভেন্দুরা? এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে। উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের মাসখানেকের মধ্যে উপনির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা ও রায়গঞ্জ হাতছাড়া হয়েছিল বিজেপির। তারও আগে উপনির্বাচনে তারা হেরেছিল শান্তিপুর, দিনহাটা, ধূপগুড়িতে। এবার উত্তরবঙ্গে একটি আসন হারানোর পাশাপাশি ভোটও কমে গিয়েছে পদ্ম শিবিরের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, সংগঠনের দুরাবস্থায় মনোবল হারাচ্ছেন বিধায়করা। শাসকদলের উপর কোন রণকৌশলে চাপ সৃষ্টি করা যায় সেই পরিকল্পনা ব্যতীতও, বৈঠকে বিধায়কদের মনোবল বৃদ্ধি করতে পারেন বিরোধী দলনেতা। বিজেপির দুঃসময় নিয়ে নানা মত রয়েছে দলের অন্দরে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘উপনির্বাচনে এই রকম হয়। ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন জিতে বিজেপি সরকার গঠন করবে!’ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘এটা নিয়ে আমরা ভাবিত নই। নির্বাচনমুখী সংগঠন ও আন্দোলনমুখী দল বা মোর্চা তৈরি করতে হবে।’ যদিও বিজেপির একাংশের দাবি, নিচু তলায় দলকে শক্তিশালী করতে না পারাই গেরুয়া শিবিরে ধারাবাহিক ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। যদিও এই সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কণ্ঠেও। তাঁর ভাষায়, ‘প্রচার, রণকৌশল, সংগঠন পুরো প্রক্রিয়ায় কোথায় ভুল হচ্ছে, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে হবে।’
স্পষ্ট ভাষায়, বঙ্গে তৃণমূলের দাপটে যে নিশ্চিহ্ন হতে পারে বিজেপি সেই আভাস পাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বগণ। সেই উপলব্ধি থেকেই এবার বাড়তি তৎপরতা দলের। ইতিমধ্যেই স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তৃণমূলের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। আগামী অধিবেশনে বিধায়কদের কী কী করণীয়, কোন বিষয়ের উপর মুলতুবি প্রস্তাব আনতে হবে, কোন সময়ে প্রতিবাদ করে কক্ষত্যাগ করতে হবে–এইসব বিষয়ে রণকৌশল স্থির হতে চলেছে বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে।